Header Ads

test

মার্কিন সহায়তার পরও ভারত কেন '৬২-র যুদ্ধে চীনের কাছে হেরেছিল?

ভারত ও চীনের স্বশাসিত এলাকা তিব্বতকে সংযুক্ত করেছে যে নাথুলা পাস, সেখানে চীনের সৈন্যদের পাহারা
ভারত ও চীনের স্বশাসিত এলাকা তিব্বতকে সংযুক্ত করেছে যে নাথুলা পাস, সেখানে চীনের সৈন্যদের পাহারা - ফাইল ছবি
ভারত আর চীনের মধ্যকার চলমান উত্তেজনার পটভূমিতে বিবিসি হিন্দির বিশেষ প্রতিবেদন, তৈরি করেছেন রজনীশ কুমার:
ডোকালাম অঞ্চলকে কেন্দ্র করে ভারত আর চীনের মধ্যে যখন উত্তেজনা তৈরি হয়েছে, তখন বারে বারেই উঠে আসছে ১৯৬২ সালের চীন-ভারত যুদ্ধের প্রসঙ্গ।
ওই যুদ্ধে ভারত শোচনীয়ভাবে পরাস্ত হয়েছিল।
চীনের সরকারি গণমাধ্যম ক্রমাগত মনে করিয়ে দিচ্ছে ৬২-র সেই যুদ্ধের কথা।
অন্যদিকে ভারতের তরফে বলা হচ্ছে ১৯৬২'র অবস্থা থেকে অনেক দূর এগিয়ে গেছে তারা।
ঐতিহাসিক তথ্য এটাই যে ওই যুদ্ধে আমেরিকা ভারতকে সাহায্য করতে এগিয়ে এসেছিল। আমেরিকার তুলনায় ১৯৬২ সালের চীনা শক্তি বলতে গেলে কিছুই ছিল না।
এক মহাশক্তিধর রাষ্ট্রের সাহায্য পেয়েও ভারত ওই যুদ্ধে কী ভাবে হেরেছিল?
সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট জন এফ কেনেডির সঙ্গে ভারতরে প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহরু
সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট জন এফ কেনেডির সঙ্গে ভারতরে প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহরু
দিল্লির জওহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয়ের আমেরিকা, কানাডা ও লাতিন আমেরিকা স্টাডি সেন্টারের অধ্যাপক চিন্তামণি মহাপাত্রর কথায়, "যখন চীন ভারতের ওপরে হামলা করে, সেই সময়ে কিউবায় ক্ষেপণাস্ত্র সঙ্কট নিয়ে ব্যতিব্যস্ত ছিল আমেরিকা।"
"সোভিয়েত ইউনিয়ন কিউবায় ক্ষেপণাস্ত্র পাঠিয়ে দিয়েছিল, যার ফলে পারমানবিক যুদ্ধের একটা আশঙ্কা তৈরি হয়েছিল। গোটা পৃথিবীই সেই সময়ে একটা সঙ্কটের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছিল," বলছিলেন চিন্তামণি মহাপাত্র।
কেনেডিকে লেখা নেহরুর চিঠি
অধ্যাপক মহাপাত্রের কথায়, "একটা কমিউনিস্ট দেশ চীন যখন ভারতের ওপরে হামলা করল, সেই একই সময়ে আরেক কমিউনিস্ট দেশ সোভিয়েত ইউনিয়ন আমেরিকার বিরুদ্ধে কিউবাতে ক্ষেপণাস্ত্র পাঠালো। আমেরিকা ভারতকে সাহায্য করতে পুরো তৈরি ছিল।"
তিনি আরও বলেন, "তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী পণ্ডিত জওহরলাল নেহরু আমেরিকার প্রেসিডেন্ট জন এফ কেনেডিকে বারেবারে চিঠি পাঠিয়ে সাহায্য চাইছিলেন। নেহরু এমনও বলেছিলেন যে তিনি যুদ্ধবিমান কিনতেও আগ্রহী।"
নেহরুর চিঠি পেয়েই প্রেসিডেন্ট কেনেডি সাহায্যের সিদ্ধান্ত নেন। যদিও এটাও ঘটনা যে আমেরিকার পররাষ্ট্র দপ্তরের ওপরে পাকিস্তানের চাপ ছিল, যাতে চীনের বিরুদ্ধে ভারতকে সাহায্য না করা হয়।
তার অর্থ কি এটাই যে প্রেসিডেন্ট কেনেডি এই ঘটনায় একা হয়ে গিয়েছিলেন?
জন এফ কেনেডি
জন এফ কেনেডি
"না। ব্যাপারটা সে রকম হয় নি," বলছিলেন অধ্যাপক মহাপাত্র। "তিনি একা পড়ে যাননি, কিন্তু পাকিস্তান আমেরিকার ওপরে চাপ দিচ্ছিল।"
"গোঁড়ার দিকে নেহরু তো প্রেসিডেন্ট কেনেডির সঙ্গে যুদ্ধের সরঞ্জাম কেনার কথা বলছিলেন। কিন্তু তখনই ভারতীয় সেনাবাহিনীকে চীন এমন একটা ধাক্কা দিয়ে এগিয়ে আসতে লাগল, ফলে নেহরু ওয়াশিংটনে একটা বিপদ সঙ্কেত পাঠাতে বাধ্য হলেন। চীন পুরোপুরিভাবে সমতল এলাকায় চলে এসেছিল।"
নেহরুর ওই বিপদ বার্তা পেয়ে আমেরিকা ভারতকে সাহায্য করার সিদ্ধান্ত নিলো। তবে যতক্ষণে আমেরিকার সাহায্য এসে পৌঁছুল, ততটা সময়ে চীন কিছুটা পিছিয়ে গেছে নিজের থেকেই। তাই আমেরিকার আর বিশেষ কিছু করার ছিল না।
সিদ্ধান্ত নিতে কেন দেরী করল আমেরিকা?
কেনেডি সেন্টারের প্রাক্তন সিনিয়র ফেলো অনিল আঠালে ২০১২ সালে রেডিফ ডট কমকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন, "ঘটনাচক্রে সেই সময়ে কিউবায় ক্ষেপণাস্ত্র সঙ্কট তৈরি হয়েছিল। বিশ্বের দুই পরাশক্তি আমেরিকা আর সোভিয়েত ইউনিয়ন - দুই পক্ষই কিউবায় হাজির। ওই পরিস্থিতিতে বিশ্বের গণমাধ্যম ভারত-চীন যুদ্ধটাকে পুরোপুরি উপেক্ষা করেছিল।"
"কিন্তু এখন যদি আমরা পিছন ফিরে তাকাই তাহলে বুঝতে পারব যে কিউবায় ক্ষেপণাস্ত্র সঙ্কটটা অ্যাকাডেমিক রিসার্চের দিক থেকে বেশী গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু ভারত চীন যুদ্ধের প্রভাব অনেক বেশী ছিল সেই সময়ে।"
দালাইলামার সঙ্গে জওহরলাল নেহরু
দালাইলামার সঙ্গে জওহরলাল নেহরু
অধ্যাপক মহাপাত্র বলছেন, "১৫ দিনের যুদ্ধের পরে আমেরিকা যখন সাহায্য নিয়ে এলো, ততদিনে চীন পিছিয়ে গেছে। আমেরিকার এই ভয়টাও ছিল যে চীন যখন ভারতে হামলা করছে, সেই সময়েই পাকিস্তানও না ভারতে হামলা চালায়।"
"তাই আমেরিকা পাকিস্তানকে বোঝানোর চেষ্টা করছিল যে চীন কমিউনিস্ট দেশ, নিজেদের এলাকা বাড়ানোর জন্য চীন তাদের দেশও দখল করে নিতে পারে। এই যুক্তিটা অবশ্য পাকিস্তান মানতে চায় নি। তখনই তারা আমেরিকার কাছে দাবী করে কাশ্মীরের ব্যাপারে আমেরিকা তাদের মদত দিক।"
কিউবার ক্ষেপণাস্ত্র সঙ্কটকে বেশী গুরুত্ব
কিছু বিশেষজ্ঞ মনে করেন যে আমেরিকার কাছে সেই সময়ে কিউবার সঙ্কট বেশী গুরুত্বপূর্ণ ছিল। আমেরিকার ফ্লোরিডা থেকে কিউবার দূরত্ব মাত্র ৮৯ কিলোমিটার, আর সেখানে সোভিয়েত ইউনিয়ন ক্ষেপণাস্ত্র পাঠিয়েছে।
আমেরিকার পুরো নজর তখন সেদিকেই ছিল। আর তখন আমেরিকাকে সাহায্য করার মতো কোনও দেশও ছিল না।
নেহরু তখন জোটনিরপেক্ষ আন্দোলনে ভারতকে সামিল করেছিলেন।
১৯৬২ সালের কিউবা মিসাইল সংকটের সময় একটি সোভিয়েত জাহাজের ওপর দিয়ে উড়ে যাচ্ছে একটি মার্কিন টহল বিমান
১৯৬২ সালের কিউবা মিসাইল সংকটের সময় একটি সোভিয়েত জাহাজের ওপর দিয়ে উড়ে যাচ্ছে একটি মার্কিন টহল বিমান
জওহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয়ের চীন স্টাডিজ সেন্টারের অধ্যাপক হেমন্ত আদলাখার কথায়, "নেহরুর ওই নীতিতে একটা বড় ধাক্কা লেগেছিল, কারণ জোটনিরপেক্ষ দেশগুলির কেউই ভারতের দিকে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেয়নি সেই সময়ে। সোভিয়েত ইউনিয়নও ভারতকে একা ছেড়ে দিয়েছিল।"
"যদিও আমেরিকা সাহায্য পাঠানোর আগেই চীন নিজের থেকেই কিছুটা পিছিয়ে গিয়েছিল, তবে আমেরিকা এগিয়ে না এলে চীন আরও অনেকটা ভেতরে ঢুকে পড়ত," বলছিলেন অধ্যাপক আদলাখা।
অধ্যাপক মহাপাত্র অবশ্য মনে করেন যে নেহরুও নিজের জোটনিরপেক্ষ নীতির কারণেই প্রথমে আমেরিকার সাহায্য চাইতে কিছুটা সংকোচ করেছিলেন।
কিন্তু চীন যখন আসাম পর্যন্ত পৌঁছে গেল, তখন নেহরুর সামনে আর কোনও বিকল্প ছিল না। তিনি সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন যে আন্তর্জাতিক নীতির তুলনায় জাতীয় সুরক্ষাই বেশী গুরুত্বপূর্ণ।
চীনের প্রধানমন্ত্রী চৌ এন লাইয়ের সঙ্গে জওহরলাল নেহরু
চীনের প্রধানমন্ত্রী চৌ এন লাইয়ের সঙ্গে জওহরলাল নেহরু
সেই সংকটকালে আমেরিকার প্রেসিডেন্ট জন এফ কেনেডি ভারতীয়দের মনে একটা জায়গা করে নিয়েছিলেন।
ভারতের মানুষ মনে করতে শুরু করেছিল যে বিপদের সময়েই কেনেডি সহায়তা করেছেন।
"কেনেডি সাহায্য করতে বেশ উৎসাহীই ছিলেন, যদিও ভারত তখনও সাহায্য চায়নি। কেনেডি তখন ভারতে বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছিলেন," বলছিলেন অধ্যাপক মহাপাত্র।
চীন কি জেনেবুঝেই ভারতের ওপরে হামলা করার সময়টা বেছেছিল?
যে সময়ে কিউবায় ক্ষেপণাস্ত্র সঙ্কট চলছে, সেই সময়টাকেই কেন চীন ভারতের ওপরে হামলা করার জন্য বেছে নিয়েছিল, এই প্রশ্নে জবাবে অধ্যাপক মহাপাত্র বলছিলেন, "চীন আর সোভিয়েত ইউনিয়ন দুটোই যেহেতু কমিউনিস্ট দেশ, সম্ভবত সেই কারণেই হামলার সময়টা বেছে ছিল চীন।"
তিনি আরও বলেন, "ভারতের ওপরে হামলার দু'বছর বাদে ১৯৬৪ সালে চীন প্রথম পরীক্ষামূলক ভাবে পরমাণু বিস্ফোরণ ঘটায়।"
তাঁর কথায়, এ নিয়ে কোনও দ্বন্দ্ব নেই যে ১৯৬২-র যুদ্ধের সেই সময় থেকে ভারত এখন অনেক এগিয়ে গেছে, আর কিউবাতে এখন মিসাইল সংকটও নেই।
পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে কেনেডি ও নেহরু
পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে কেনেডি ও নেহরু

Source:
http://mybangla24.com/bbc-bangla-news.php

No comments

Thanks for your valuable comment!