Header Ads

test

রোহিঙ্গা ইস্যু: মুসলিম দেশগুলোর জোরালো পদক্ষেপ নেই যে কারণে



দেশহীন জাতি’ ও ‘বিশ্বের সবচেয়ে নিপীড়িত জোনগোষ্ঠি’ হিসেবে পরিচিত রোহিঙ্গারা ইতিহাসের সবচেয়ে কঠিন সময় পার করছে। একসাথে ৪ লাখের বেশি রোহিঙ্গা অতীতে আর কখনো দেশছাড়া হয়নি। ১৯৬২ সালের পর গত কয়েক দশকে ১০ লাখের মতো রোহিঙ্গা বিভিন্ন দেশে আশ্রয় নিয়েছেন। কিন্তু গত তিন সপ্তাহে বাংলাদেশে পালিয়ে এসেছেন সাড়ে চার লাখের কাছাকাছি মানুষ। এ দফা বর্বরতায় কয়েক শ’ পুরুষকে হত্যা করেছে মিয়ানমার সেনারা। বাদ দেয়নি শিশুদেরকেও। নারীরা হয়েছেন ধর্ষিত। কয়েকশ গ্রাম পুড়িয়ে ছাই করে দেয়া হয়েছে।
এ অবস্থায় গত ২৫ আগস্টের পর থেকে ঢল নামে বাংলাদেশ সীমান্তে। প্রাণ নিয়ে পালিয়ে আসতে থাকেন লাখো নারী-শিশু-বৃদ্ধ। সর্বস্বান্ত হয়ে আসা এসব মানুষ বাংলাদেশে ঢুকে পড়েন মানবিক বিপর্যয়ে। জাতিসংঘ এই বিপর্যয়কে স্মরণকালের ভয়াবহ শরণার্থী সংকট বলে অভিহিতি করেছে। একই সাথে বলেছে, মিয়ানমার সরকার রোহিঙ্গাদের ওপর জাতিগত নিধন অভিযান চালাচ্ছে। অর্থাৎ, আরাকানের এই মুসলিম জনগোষ্ঠিকে নিশ্চিহ্ন করে দিতে চায় সুচি সরকার।
কিন্তু এই চরম মুহূর্তে মুসলিম বিশ্বের দেশগুলো উল্লেখ করার মতো কোনো পদক্ষেপ নিচ্ছে না মিয়ানমারের বিরুদ্ধে। এমনকি জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের চলমান অধিবেশনেও মুসলমি দেশগুলোর শক্ত কোনো অবস্থান চোখে পড়ছে না। অথচ, ৭০ এর দশকে প্রথম বড় আকারে যখন রোহিঙ্গাদের দেশছাড়া করা হয়েছিল, তখন ২ লাখের বেশি শরণার্থীকে আশ্রয় দিয়েছিল সৌদি আরব। অতীতে রোহিঙ্গাদের পক্ষে সরব ছিল পাকিস্তানও। দেশটিতে বর্তমানে দেড় লাখের বেশি এই জনগোষ্ঠির মানুষ বাস করছেন।

রোহিঙ্গা সংকটের বর্তমান ধাপে তুরস্কের কথা বাদ দিলে শুধু নিন্দার মধ্যেই নিজেদের সক্রিয়তা সীমাবদ্ধ রেখেছে মুসলিম দেশগুলো। কিন্তু এই নিষ্ক্রিয়তার পেছনের কারণ কী? বার্তা সংস্থা এপি এ নিয়ে একটি বিশ্লেষণ প্রকাশ করেছে। তাতে বলা হয়েছে, ব্যবসায়িক স্বার্থই প্রভাবশালী মুসলিম রাষ্ট্রগুলোকে রোহিঙ্গাদের পক্ষে সক্রিয় হওয়া থেকে দূরে রাখছে।

গভীর সমুদ্র উপকূলে মিয়ানমারের অবস্থান। দেশটির আরাকান প্রদেশ হয়ে মধ্যপ্রাচ্য-ককেশাস ও চীনকে সংযুক্ত করেছে তেল সরবরাহের একটি পাইপলাইন। এই পাইপলাইন দিয়ে চীন তার ইউনান প্রদেশে তেল আমদানি করে থাকে। সৌদি আরবসহ মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলো এই লাইন দিয়ে চীনে তেল রফতানি করতে চায়। এ বিষয়ে দুই বছর আগে বেইজিং-রিয়াদ চুক্তিও করে রেখেছে। বর্তমান পরিস্থিতিতে মিয়ানমারের বিরুদ্ধে কোনো কঠোর পদক্ষেপ নিতে চাইলে চীনের সাথে এই ব্যবসা ক্ষতিগ্রস্ত হওয়া শঙ্কা আছে। আবার পাইপলাইনের পুরো নিরাপত্তার দায়িত্ব মিয়ানমারের। নাইপিদো এটির নিরাপত্তা বিধান না করলে বিপাকে পড়বে রফতানিকারকরা।

অন্যদিকে পাকিস্তানের সঙ্গে সামরিক সহযোগিতা চুক্তি হয়েছে মিয়ানমারের। চীন ও পাকিস্তানের যৌথ উদ্যোগে তৈরি জেএফ-১৭ থান্ডার যুদ্ধবিমান কেনার চুক্তি আছে মিয়ানমারের। এর পরবর্তি প্রজন্মের যুদ্ধবিমান কিনতেও আগ্রহী নাইপিদো। এছাড়া সামরিক ক্ষেত্রে চীন-পাকিস্তান-মিয়ানমারের পরস্পপরের মধ্যে বেশ কিছু সহযোগিতা প্রকল্প রয়েছে। ফলে ইসলামাবাদ জোরালোভাবে মিয়ানমারের বিপক্ষে দাঁড়াতে চাইবে না।

ইরানের ক্ষেত্রেও একই কথা প্রযোজ্য। ভারতের সাথে বাণিজ্যিক ও সামরিক সহযোগিতা বাড়িয়েছে দেশটি। চীনের সাথেও উল্লেখযোগ্য ব্যবসায়িক সম্পর্ক আছে তেহরানের। ফলে চীন ও ভারত যখন মিয়ানমার সরকারের পক্ষে অবস্থান নেবে তখন ইরান এর বিপরীতে জোরালোভাবে দাঁড়াবে না।

তবে রোহিঙ্গাদের পক্ষে খুব জোরালো কিছু করতে আগ্রহী না হওয়ার বিষয়টি ‘পুষিয়ে দিতে’ মুসলিম দেশগুলো কক্সবাজারের শরণার্থী শিবিরগুলোতে প্রচুর পরিমাণ ত্রাণ সহায়তার প্রতিশ্রুতি দিচ্ছে। কিছু ত্রাণ এসে পৌঁছেছেও।

সূত্র: যমুনা টিভি

Source: https://www.jugantor.com/online/international/2017/09/21/58552/রোহিঙ্গা-ইস্যু:-মুসলিম-দেশগুলোর-জোরালো-পদক্ষেপ-নেই-যে-কারণে

No comments

Thanks for your valuable comment!