ভারতে হিন্দু দেবী দুর্গাকে 'যৌনকর্মী' বলে বিপদে অধ্যাপক
হিন্দুদের দেবী দুর্গাকে 'যৌনকর্মী' বলে বিপাকে পড়েছেন দিল্লির অধ্যাপক |
২৪ সেপ্টেম্বর ২০১৭
হিন্দুদের দেবী দুর্গা সম্পর্কে ফেসবুকে একটি অপমানজনক পোস্ট করার অভিযোগে দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ের এক অধ্যাপকের বিরুদ্ধে পুলিশে অভিযোগ দায়ের করেছেন তারই সহকর্মীরা।
কেদার মন্ডল নামে ওই অভিযুক্ত শিক্ষককে সাসপেন্ড করার দাবিতে আন্দোলন শুরু করেছে ক্ষমতাসীন বিজেপি-র ছাত্র সংগঠন এবিভিপি-ও।
এদিকে ওই শিক্ষক বিতর্কিত পোস্টটি ডিলিট করে দিয়ে আত্মগোপনে চলে গেছেন - যদিও তার সেই পোস্টকে ঘিরে আসন্ন দুর্গাপুজার আগে দিল্লি সরগরম হয়ে উঠেছে।
কিন্তু ঠিক কী লিখে আর কেন সহকর্মী ও ছাত্রদের এই তোপের মুখে পড়েছেন অধ্যাপক কেদার মন্ডল?
দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ের দয়াল সিং কলেজের অধ্যাপক কেদার মন্ডল শুক্রবার রাতে নিজের ফেসবুক অ্যাকাউন্টে লিখেছিলেন ভারতের মিথোলজি অনুসারে দুর্গা একজন যৌনকর্মী - তার ভাষায় 'ভেরি সেক্সি প্রস্টিটিউট'।
দুর্গাপুজার ঠিক আগে দেবীকে এভাবে অপমান করে তিনি আসলে সাম্প্রদায়িক বিদ্বেষ ছড়াতে চাইছেন - এই অভিযোগে পরদিনই তার বিরুদ্ধে দিল্লির লোদি রোড পুলিশ থানায় অভিযোগ দায়ের করে বিশ্ববিদ্যালয়ের দক্ষিণপন্থী শিক্ষকদের সংগঠন এনডিটিএফ।
ওই সংগঠনের সভাপতি এ কে বাগি বলছিলেন, "আমরা মনে করি প্রথমে তার মানসিক চিকিৎসা দরকার। খুব শস্তা প্রচার পাওয়ার লক্ষ্যেই তিনি এ ধরনের আপত্তিকর কথাবার্তা লিখেছেন।"
"আগেও তিনি এধরনের জিনিস লিখেছেন, তবে এবার তিনি সব সীমা ছাড়িয়ে গেছেন এবং দেশের সাম্প্রদায়িক পরিবেশ বিষিয়ে দেওয়ার জন্যই এ কাজ করেছেন বলে আমাদের ধারণা।"
দিল্লি পুলিশ জানিয়েছে, তথ্যপ্রযুক্তি আইনের কোন কোন ধারায় অভিযুক্ত শিক্ষকের বিরুদ্ধে চার্জ আনা যায়, সেটা তারা খতিয়ে দেখছে।
বিজেপির ছাত্র সংগঠন এবিভিপি-ও দাবি তুলেছে অধ্যাপক মন্ডলকে অবিলম্বে বহিষ্কার করতে হবে, আলাদাভাবে সেই একই দাবি জানিয়েছে কংগ্রেস সমর্থক ছাত্ররাও।
তিনি নিজে অবশ্য এই বিতর্ক শুরু হওয়ার পর থেকেই গা ঢাকা দিয়েছেন, পোস্টটি ডিলিট করে দিলেও কোনও ফোন ধরছেন না বা এসএসএসেরও জবাব দিচ্ছেন না।
এদিকে তার আত্মপক্ষ সমর্থনের অধিকার আছে বলে মানলেও তার পোস্টটিকে সমর্থন করছেন না দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ের বামপন্থী শিক্ষকরাও।
দুর্গাপূজার উপলক্ষে প্রতিমা নির্মাণ চলছে |
ডেমোক্র্যাটিক টিচার্স ফ্রন্টের সভাপতি শাশ্বতী মজুমদার যেমন বিবিসিকে বলছিলেন, "ওই শিক্ষক যে ভাষা ব্যবহার করেছেন সেটা কিছুতেই মানা যায় না - ফলে মানুষ অভিযোগ করবেন এটা খুব স্বাভাবিক। আপনি নিশ্চয় দেখেছেন উনি কী লিখেছেন, ওতে আমরা কিছুতেই সায় দিতে পারি না।"
ঘটনা হল, দেবী দুর্গাকে যৌনকর্মী বলা ঠিক হয়েছে কি না, সেই প্রশ্নে ভারতের পার্লামেন্টে খোলাখুলি বিতর্ক হয়েছিল গত বছরেই।
ক্যাবিনেট মন্ত্রী স্মৃতি ইরানি সেখানে জেএনইউ-র তফসিলি জাতিভুক্ত ছাত্রদের একটি ফেসবুক পেজ থেকে উদ্ধৃতি দিয়ে বলেছিলেন, "তারা বলছে ফর্সা সুন্দরী নারী দুর্গা কীভাবে কৃষ্ণাঙ্গ আদিবাসীদের ছলেবলে হত্যা করছে - দুর্গাপুজা না কি তারই উৎসব। আরও বলা হচ্ছে, অসুর নিধনে দেবতারা নাকি দুর্গা নামে এক যৌনকর্মীকে ভাড়া করেছিলেন।"
দিল্লিতে অধ্যাপক কেদার মন্ডলও দুর্গার বর্ণনা করেছিলেন অনেকটা একই ভঙ্গীতে। কিন্তু ভারতীয় পুরাণতত্ত্বের বিশেষজ্ঞ নৃসিংহপ্রসাদ ভাদুড়ী বিবিসিকে বলছিলেন, এটা আসলে পুরাণের খন্ডিত ও বিকৃত ব্যাখ্যা ছাড়া কিছুই নয়।
"রামায়ণ-মহাভারত-পুরাণই তো আমাদের মিথোলজি। তো সেখানে এক জায়গায় আছে শুম্ভ-নিশুম্ভকে আকৃষ্ট করতে দেবী দুর্গা মোহিনী রূপ ধারণ করেন। কিন্তু সেই মায়াবী রূপও তো আসলে তাদের হত্যা করতেই - এখানে আমি তো অন্তত কোনও যৌনকর্মীর রেফারেন্স পাই না।
"আসলে মিথোলজি হল সমুদ্রের মতো - এটা একটা টোটালিটি বা সামগ্রিকতার মধ্যে দিয়ে দেখতে হয়। সেই সমুদ্র থেকে এক অঞ্জলি জল তুলে কেউ যদি বলেন এটাই আসল মিথোলজি, তাহলে খুব ভুল হবে", বলছিলেন অধ্যাপক ভাদুড়ী।
সেই ভুলের ফাঁদে পা দিয়েই এখন বেকায়দায় পড়েছেন দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ের অভিযুক্ত শিক্ষক।
যেভাবে ও যে ভাষায় তিনি দেবী দুর্গাকে আক্রমণ করেছেন, তাতে ভারতে যারা সব সময় মতপ্রকাশের স্বাধীনতার কথা বলেন তারাও এখন তাঁর পাশে দাঁড়াচ্ছেন না।
Source: http://www.bbc.com/bengali/news-41377938
Post a Comment