Header Ads

test

যুদ্ধ কি লেগেই যাবে?

যুদ্ধ কি লেগেই যাবে?

উত্তর কোরিয়া-যুক্তরাষ্ট্র উত্তেজনা

যুদ্ধ কি লেগেই যাবে?

যুক্তরাষ্ট্র ও উত্তর কোরিয়ার মধ্যে ক্রমাগত বেড়ে চলা উত্তেজনা অবশেষে বোমারু বিমান ও জেট ফাইটারের মতো যুদ্ধাস্ত্র উড়াল দেওয়ার দিকে মোড় নিয়েছে। শনিবার উত্তর কোরিয়ার পূর্ব উপকূলের দিকে আন্তর্জাতিক আকাশসীমায় মার্কিন বোমারু বিমান বি-১বি ওড়ার পরে মার্কিন প্রতিরক্ষা দপ্তর পেন্টাগন বলেছে, যেকোনো ধরনের হুমকিকে পরাজিত করার সামরিক শক্তি যে যুক্তরাষ্ট্রের আছে, তা উত্তর কোরিয়াকে বোঝানোর জন্যই তাদের এ প্রদর্শনীর মূল উদ্দেশ্য।
এর আগে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেছিলেন, যদি যুক্তরাষ্ট্রকে নিজেদের সুরক্ষায় ব্যবস্থা গ্রহণে বাধ্য করা হয় তবে তারা উত্তর কোরিয়াকে ‘সম্পূর্ণ ধ্বংস’ করে দেবে। এর আগে উত্তর কোরিয়া ষষ্ঠতম পরমাণু পরীক্ষাটি চালিয়েছে এবং দেশটির নেতা কিম জং উন হুমকি দিয়েছেন, তাঁদের হাতে যে অস্ত্র আছে তা দিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের গুয়ামে আঘাত করা সম্ভব। তা ছাড়া প্রশান্ত মহাসাগরীয় এলাকায় তাঁরা হাইড্রোজেন বোমারও পরীক্ষা চালাবেন। খবর আছে যে উত্তর কোরিয়া যেসব আন্তর্মহাদেশীয় ব্যালিস্টিক মিসাইলের সফল পরীক্ষা চালিয়েছে তা দিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের মূল ভূখণ্ডে আঘাত হানা আসলেই সম্ভব।
শনিবার উত্তর কোরিয়ার পূর্ব উপকূলের দিকে মার্কিন বোমারু বিমান ওড়ার পর বিশেষজ্ঞদের অনেকেই আশঙ্কা করছেন যে দুই দেশের মধ্যে সামরিক সংঘাত বুঝি এবার লেগে গেল। জাতিসংঘের মাধ্যমে উত্তর কোরিয়ার ওপর অবরোধ আরোপসহ রাশিয়া ও চীনের মাধ্যমে তাদের আলোচনার টেবিলে আনার চেষ্টা তো কম হলো না। এর ওপর ইদানীং দুই দেশের দুই নেতা পরস্পরকে যেভাবে ‘বদ্ধ উন্মাদ’ বলে সম্বোধন করছেন তাতে ‘দুর্ঘটনাবশত’ একটা যুদ্ধ লেগে গেলে বিস্ময়ের কিছু নেই। যে কেউই আগ বাড়িয়ে আক্রমণ করে বসলে যুদ্ধ অনিবার্য এবং তা বৃহৎ পরিসরে ছড়িয়ে পড়বে। আবার অনেকে বলছেন, এখনই আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই।
এ ব্যাপারে তাঁরা কিছু যুক্তিও তুলে ধরেন।
কেউই যুদ্ধ চায় না একটা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয় যে কোরীয় উপদ্বীপে একটি যুদ্ধ কোনো পক্ষের জন্যই লাভ এনে দেবে না। উত্তর কোরীয় সরকারের প্রধান লক্ষ্য হচ্ছে, ক্ষমতায় টিকে থাকা এবং যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সরাসরি সংঘাত তাদের সে লক্ষ্যকে মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করবে। সংবাদমাধ্যম বিবিসির প্রতিরক্ষাবিষয়ক সাংবাদিক জোনাথন মারকাস বলেন, ‘বর্তমান পরিস্থিতিতে যুক্তরাষ্ট্র বা তার মিত্রদের ওপর উত্তর কোরিয়ার যেকোনো ধরনের হামলা বড় ধরনের যুদ্ধের দিকে মোড় নিতে পারে। কিন্তু আমাদের মনে হয়, উত্তর কোরিয়ার নেতা কিম জং উনের সরকার এমন আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত নেবে না। ’ মারকাসের মতে, এ কারণেই উত্তর কোরিয়া পরমাণু অস্ত্রে শক্তিশালী দেশ হওয়ার জন্য উঠেপড়ে লেগেছে। এ জন্য তারা বিপুল অর্থ খরচেও পিছপা হচ্ছে না। তা ছাড়া কিম জং উন নিশ্চয়ই চান না যে তাঁর পরিণতিও লিবিয়ার নেতা মুয়াম্মার গাদ্দাফি বা ইরাকের সাদ্দাম হোসেনের মতো হোক।
দক্ষিণ কোরিয়ার রাজধানী সিউলের কুকমিন ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক আন্দ্রেই ল্যানকভ যুক্তরাজ্যের গার্ডিয়ান পত্রিকাকে বলেন, ‘যুদ্ধের সম্ভাবনা খুবই কম। ’ আবার উত্তর কোরিয়া সমানভাবে ‘কূটনৈতিক সমাধানেও আগ্রহী নয়’। তিনি বলেন, ‘তারা যুক্তরাষ্ট্রের মানচিত্র থেকে শিকাগোকে প্রথমে নিশ্চিহ্ন করতে আগ্রহী, তারপর পরে আগ্রহী কূটনৈতিক পথে হাঁটতে। ’
তবে আগ বাড়িয়ে যুক্তরাষ্ট্র যদি উত্তর কোরিয়ায় হামলা চালায় তবে কী হবে—এমন প্রশ্নের জবাবে বিশেষজ্ঞরা বলেন, যুক্তরাষ্ট্র সেটা করবে না। কারণ তাহলে উত্তর কোরিয়া পাল্টা-আঘাত হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রের মিত্র দেশ দক্ষিণ কোরিয়া ও জাপানে হামলা করতে পারে। এতে অনেক প্রাণহানি ঘটবে, বিশেষ করে সাধারণ আমেরিকান আর সৈনিকদের। সর্বোপরি ওয়াশিংটন এমন কোনো ঝুঁকিতে যেতে চায় না যার ফলে আমেরিকান ভূখণ্ডে কোনো পারমাণবিক হামলা হতে পারে।
সবশেষে রয়েছে চীন। উত্তর কোরিয়ার ঐতিহাসিকভাবে স্বীকৃত মিত্র চীন তাদের ধ্বংস চায় না। তারা চায় না উত্তর কোরিয়া ভেঙে পড়ুক আর যুক্তরাষ্ট্র ও দক্ষিণ কোরিয়ার সেনারা একেবারে চীনের সীমানায় চলে আসুক। তা ছাড়া উত্তর কোরিয়া যুদ্ধবিধ্বস্ত হলে কোটি কোটি মানুষ চীনে আশ্রয় নেবে। তখন একটি সামাজিক, অর্থনৈতিক বিপর্যয় তৈরি হবে। চীন সেটি চায় না বলে স্থিতিশীলতা তাদের কাম্য।
কথার লড়াই আর নাও থাকতে পারে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প অবশ্য উত্তর কোরিয়াকে যেভাবে হুমকি দিচ্ছেন তা একজন প্রেসিডেন্টের জন্য ব্যতিক্রম সন্দেহ নেই। কিন্তু তার মানে এই নয় যে যুক্তরাষ্ট্র পুরোদমে যুদ্ধের দিকে এগোচ্ছে। গত আগস্টে মার্কিন একজন জ্যেষ্ঠ সেনা কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে বলেন, ‘উত্তেজক কথাবার্তা বাড়ছে মানে এই নয় যে আমাদের অবস্থানও বদলাচ্ছে। ’ নিউ ইয়র্ক টাইমস পত্রিকার কলামিস্ট ম্যাক্স ফিশার অবশ্য বলেন, ‘এগুলো এক ধরনের সংকেত। নেতাদের পূর্বচিন্তাহীন তাত্ক্ষণিক মন্তব্য এগুলো নয়। বেশির ভাগ আন্তর্জাতিক সম্পর্কের ক্ষেত্রেই এসব অবশ্যই বিবেচ্য বিষয় হয়ে দাঁড়ায়। ’
তবে মার্কিন বোমারু বিমান উত্তর কোরিয়ার উপকূল দিয়ে উড়ে যাওয়ার পর আবার অনেকের মনেই আশঙ্কা দেখা দিয়েছে যে কূটনৈতিক সমাধানের চেষ্টা চললেও ‘দুর্ঘটনাবশত’ যুদ্ধ একটা লেগে যেতে পারে। মার্কিন থিংক ট্যাংক আর্মস কন্ট্রোল অ্যাসোসিয়েশনের বিশেষজ্ঞ ড্যারিল কিমব্যাল বিবিসিকে বলেন, ‘উত্তর কোরিয়ায় কোনো কারণে বিদ্যুৎ বিভ্রাট ঘটলে দেশে হামলা হচ্ছে এমন আশঙ্কা থেকে তারা ভুল করে আগ বাড়িয়ে হামলা চালিয়ে বসতে পারে। তখন যুক্তরাষ্ট্রও ভুল করে এর জবাব দিতে পারে। বহুভাবে উভয় পক্ষই ভুল হিসাব কষতে পারে এবং এভাবে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যেতে পারে। ’
আগেও এ রকম পরিস্থিতি হয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী পিজে ক্রাউলে জানান, ১৯৯৪ সালের দিকে যুক্তরাষ্ট্র ও উত্তর কোরিয়া একবার সশস্ত্র যুদ্ধের কাছাকাছি চলে এসেছিল। তখন পারমাণবিক কমপ্লেক্সে আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষক প্রবেশে বাধা দিয়েছিল পিয়ংইয়ং। সেই সময় কিন্তু কূটনীতি দিয়েই সমস্যার সমাধান করা হয়েছে। এরপর অনেকবার যুক্তরাষ্ট্র, জাপান আর দক্ষিণ কোরিয়ায় হামলার হুমকি দেয় উত্তর কোরিয়া। কিন্তু সেগুলো কখনো বাস্তব হয়নি। আর এখন ট্রাম্প যেভাবে পাল্টাহামলার হুমকি দিচ্ছেন, তাও একজন মার্কিন প্রেসিডেন্টের আচরণের পক্ষে যুক্তিসংগত নয়। কিন্তু এখনকার পরিস্থিতিতে ক্রাউলে ট্রাম্পকে উত্তর কোরিয়ার প্রতি ব্যবস্থা নেওয়ার পরামর্শই দিয়েছেন। যদিও তিনি মনে করেন, এ ক্ষেত্রে পররাষ্ট্রমন্ত্রী রেক্স টিলারসন তাঁকে বাধা দেওয়ার চেষ্টা করবেন।
চলতি পরিস্থিতিতে রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই ল্যাভরভ দেশটির এনটিভি টেলিভিশনকে গতকাল রবিবার এক সাক্ষাৎকারে বেশ আস্থার সঙ্গেই বলেন, ‘আমেরিকা উত্তর কোরিয়ায় হামলা চালাবে না। কারণ তারা কেবল সন্দেহ করছে না, নিশ্চিতভাবেই জানে যে উত্তর কোরিয়ার হাতে পরমাণু বোমা আছে। ’ ল্যাভরভ অবশ্য এও জানান যে তিনি উত্তর কোরিয়ার পক্ষে কথা বলছেন না। তিনি বলেন, ‘আমি উত্তর কোরিয়ার পক্ষে বলছি না। আমি শুধু এটুকু বলছি যে প্রায় সবাই একমত যে তাদের এটা আছে। ’ ল্যাভরভ জানান, সমস্যার সমাধান কেবল শান্ত উপায়েই করা সম্ভব।
যুক্তরাষ্ট্র ও উত্তর কোরিয়ার মধ্যে সংলাপ আয়োজনের পরিচালক সুজানে ডিম্যাগিওও মনে করেন, যুক্তরাষ্ট্র ওই অঞ্চলে সামরিক মহড়া কমালে এবং তাদের ওপর থেকে জাতিসংঘের অবরোধ উঠিয়ে নেওয়া হলে উত্তর কোরিয়াকে আলোচনার টেবিলে বেশি আন্তরিকভাবে আনা যাবে। সূত্র : বিবিসি, এএফপি।
Source: http://www.allbanglanewspaperlist24.com/newspapers.php?q=kalerkantho.com

No comments

Thanks for your valuable comment!