মোটা হলে বেতন কম, আর পাতলা-সাতলা হলে বেতন বেশি—ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করতে রাশিয়ার জাতীয় বিমান পরিবহন সংস্থা অ্যারোফ্লোট এ ব্যবস্থা নিয়ে বেকায়দায়ই পড়েছে। এখন নিজেদের সুনাম নিয়ে টানাটানি। যাত্রী সেবিকাদের শারীরিক আকারের ভিত্তিতে বেতন ও বোনাস দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল অ্যারোফ্লোট। এই নীতি অনুযায়ী সবচেয়ে পাতলা গড়নের সেবিকারা বেশি অর্থ পেতেন। আর মোটা হলেই বেতন কম! এ বিষয়টি নিয়ে কর্মীদের মধ্যে বৈষম্য করার অভিযোগ উঠেছে অ্যারোফ্লোটের বিরুদ্ধে। প্রতিষ্ঠানটি অবশ্য এমন ব্যবস্থা নেওয়ার কথা অস্বীকার করেছে।
এ বৈষম্য নিয়ে প্রথম মুখ খোলেন ইভগেনিয়া ম্যাগুরিনা। তিনি অ্যারোফ্লোটের একজন যাত্রী সেবিকা হিসেবে কাজ করতেন। গত বছর তিনিসহ প্রতিষ্ঠানটিতে কাজ করা সব কেবিন ক্রুদের ছবি তোলে কর্তৃপক্ষ। গত অক্টোবর থেকে ইভগেনিয়া বুঝতে পারেন, তাঁর বোনাসের পরিমাণ কমে গেছে। তাঁকে আকর্ষণীয় ও দীর্ঘ যাত্রার ফ্লাইটগুলোর দায়িত্ব থেকে সরিয়ে দেওয়া হচ্ছে।
এ নিয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলেন ইভগেনিয়া। তখন তাঁকে বলা হয়, কাঙ্ক্ষিত শারীরিক গঠনের সঙ্গে সংগতি না থাকায় বেতন কমানো হয়েছে। অ্যারোফ্লোট ঠিক করেছে, কেবিন ক্রুদের পোশাকের মাপ রাশিয়ার মানদণ্ড অনুযায়ী ৪৮-এর বেশি হতে পারবে না। আন্তর্জাতিক মান অনুযায়ী, এটি হলো এল বা লার্জ সাইজের পোশাক।
ইভগেনিয়া বলেন, ‘আমি প্রথমে মানসিকভাবে প্রচণ্ড ধাক্কা খাই। এর কোনো মানে নেই। কীভাবে তাঁরা একজনের শারীরিক কাঠামো অনুযায়ী বেতন নির্ধারণ করে? বিমান পরিবহন সংস্থায় প্রায় সাত বছর ধরে কাজ করছি আমি। কোনো দিন এমনটা দেখিনি। কর্তৃপক্ষ বলছে, যাত্রী সেবিকার সাফল্য নির্ভর করে তাঁর শারীরিক কাঠামোর ওপর।’
ইভগেনিয়ার দাবি, আরও শতাধিক কেবিন ক্রু একই সমস্যার মুখোমুখি হচ্ছেন। তাঁদের অভ্যন্তরীণ ফ্লাইটে কাজ করানো হচ্ছে। বিশেষ করে রাতের ফ্লাইটে এসব কর্মীকে নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে, যেন তাঁদের কেউ দেখতে না পায়! কারণ রাতের ফ্লাইটে বেশির ভাগ যাত্রীই ঘুমিয়ে থাকেন।
শুধু ইভগেনিয়া নন, রাশিয়ায় আরও অনেক পেশায় বৈষম্যের মুখোমুখি হন নারীরা। অথচ সমাজতান্ত্রিক বিপ্লবের এই দেশে নারীদেরই বেশি অধিকার থাকার কথা ছিল। ১৯১৭ সালে দেশটির নারীরা ভোটাধিকার পেয়েছিলেন। এর কিছুদিন পরই গর্ভপাতও বৈধ করা হয়। এমনকি বিশ্বের প্রথম নারী মহাকাশচারীও পাঠিয়েছিল তৎকালীন সোভিয়েত রাশিয়া। ওই নারী ছিলেন ভ্যালেন্তিনা তেরেসকোভা। অথচ এই দেশেই এখন ৪৫৬টি পেশায় নারীদের প্রবেশাধিকার সীমিত করা রয়েছে।
মোটা হওয়ার কারণে ইভগেনিয়া আগের চেয়ে ৩০ শতাংশ বেতন কম পেয়েছেন। এ নিয়ে অ্যারোফ্লোটকে কাঠগড়ায় তুলেছেন তিনি। সম্প্রতি মামলার শুনানিও হয়েছে।
অ্যারোফ্লোটের আইনজীবীরা বলছেন, ইভগেনিয়ার প্রতি কেজি বাড়তি ওজনের জন্য প্রতিষ্ঠানের জ্বালানি খরচ বেশি হয়েছে! তাঁরা এ কথাও বলছেন, প্রতিষ্ঠানের মালিকানাধীন উড়োজাহাজের সরু করিডরের কথা চিন্তা করেই যাত্রী সেবিকাদের পাতলা গড়ন প্রয়োজন। তাঁদের দাবি, বৈষম্য করা হয়নি। তবে এসব অদ্ভুতুড়ে যুক্তিতে কান দেননি বিচারক। তিনি প্রতিষ্ঠানটির নীতিমালাকে অবৈধ ঘোষণা করেছেন।
এই ঘোষণায় ইভগেনিয়ার চোখে আসে জল। কান্নাভেজা কণ্ঠে তিনি বলেন, ‘তাঁরা ভেবেছিলেন আমরা এগুলো সহ্য করে যাব। আশা করি, এই রায়ের কারণে এখন নারীরা নিজেদের অধিকার নিয়ে লড়াই করার সাহস পাবেন।’
Source: www.prothom-alo.com/international/article/1323486/মোটা-হলেই-বেতন-কম
Post a Comment