Header Ads

test

ভূ-রাজনৈতিক স্বার্থেই মিয়ানমারের পক্ষে চীন রাশিয়া ও ভারত

‘ভারত অনেকটা ভারসাম্য বজায় রাখতে চাইছে বাংলাদেশ কিংবা মিয়ানমার কাউকেই অখুশি করতে চায় না’



রোহিঙ্গা সংকট নিয়ে বিশেষজ্ঞদের অভিমত

রাখাইন রাজ্যে রোহিঙ্গাদের ওপর বর্বর নিপীড়ন সত্ত্বেও ভূ-রাজনৈতিক স্বার্থ বিবেচনায় মিয়ানমারের পক্ষে অবস্থান নিয়েছে জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের স্থায়ী সদস্য চীন ও রাশিয়া।

বাংলাদেশের পার্শ্ববর্তী বন্ধুপ্রতিম দেশ ভারতের অবস্থানও মিয়ানমারের পক্ষে। কেননা, রাখাইন রাজ্যে রোহিঙ্গাদের বিতাড়িত করতে নৃশংসতা চলাকালে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি সেখানে উপস্থিত হয়ে সুচি সরকারকে সমর্থন দেন। সাফ জানিয়ে দেন, রাখাইনে উগ্রপন্থী সহিংসতা নিয়ে মিয়ানমারের সঙ্গে একমত পোষণ করছে ভারত।

এদিকে পরবর্তী সময়ে বাংলাদেশে আসা রোহিঙ্গা শরণার্থীদের জন্য ভারত সরকার ত্রাণ পাঠিয়েছে। এ ছাড়া পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুষমা স্বরাজ রোহিঙ্গা সংকটে বাংলাদেশের পাশে থাকবেন বলেও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে জানিয়েছেন।

তবে কূটনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করেন, রোহিঙ্গা সংকট ইস্যুতে ভারত এখন কৌশলী অবস্থান নিয়েছে। কিন্তু বাস্তবতা হল- ভূ-রাজনৈতিক স্বার্থে চীন ও রাশিয়ার মতো ভারতও মিয়ানমারের সঙ্গে আছে।

ঢাকায় কূটনৈতিক বিশ্লেষকরা যুগান্তরের কাছে এমন অভিমত ব্যক্ত করেন। জানা যায়, ৫০ বছরের সেনা শাসনকালে মিয়ানমারে বিপুল বিনিয়োগ করেছে চীন। আবার চীনে উইঘুর মুসলিম সম্প্রদায় রয়েছে।

রাশিয়ার আছে চেচেন বিদ্রোহী। তাছাড়া পশ্চিমা বিশ্বের সঙ্গে বিপরীত অবস্থানের মতো কৌশলগত স্বার্থও চীন ও রাশিয়ার রয়েছে। মিয়ানমারের উদ্দেশ্য হল- রোহিঙ্গাদের মিয়ানমার থেকে একেবারে বের করে দেয়া। কার্যত সেটিই করা হচ্ছে।

এদিকে এ বিষয়ে জানতে চাইলে ভারতে বাংলাদেশের সাবেক হাইকমিশনার লিয়াকত আলী চৌধুরী যুগান্তরকে বলেন, ‘চীন কৌশলগত দিকটার প্রতিই বেশি গুরুত্ব দিচ্ছে। কারণ চীন দীর্ঘদিন ধরেই মিয়ানমারে প্রভাব বিস্তার করে আছে। মিয়ানমারে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের হস্তক্ষেপ হলে কারা আসবে সবাই তা জানে।

সে জন্য চীন সেটা উৎসাহিত করে না। রাশিয়ার কারণও একই। তারাও আন্তর্জাতিক হস্তক্ষেপ চায় না। আন্তর্জাতিক হস্তক্ষেপ হলে তাদের দেশেও দুর্নীতিসহ নানা অভিযোগ ওঠে। সেখানেও হস্তক্ষেপের প্রশ্ন আসতে পারে। সে জন্য তারা আন্তর্জাতিক হস্তক্ষেপে বাধা দিচ্ছে।’

ভারতের অবস্থান সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘ভারত অনেকটা ভারসাম্য বজায় রাখতে চাইছে। বাংলাদেশ কিংবা মিয়ানমার কাউকেই অখুশি করতে চায় না। এখন বাংলাদেশ কতটুকু বোঝাতে সক্ষম হবে তার ওপর নির্ভর করেই ভারতের নীতি স্থির হবে।’

সাবেক এই অভিজ্ঞ কূটনীতিক লিয়াকত আলী চৌধুরী মনে করেন, ‘সার্বিক পরিস্থিতিতে বাংলাদেশ বেকায়দায় পড়েছে। রাষ্ট্রগুলো এ সমস্যাকে মানবিকতার বদলে কৌশলগত ভূ-রাজনৈতিক প্রেক্ষিতে নিয়ে গেছে। এ অবস্থায় বাংলাদেশের দায়িত্ব হবে রাষ্ট্রগুলোর চেয়েও বহির্বিশ্বে জনমত গড়ে তোলার প্রতি গুরুত্বারোপ করা।’

তিনি বলেন, ‘আমাদের পক্ষে একটা উচ্চ নৈতিক গ্রাউন্ড আছে। আমরা মানবিক বিবেচনায় বিপুলসংখ্যক রোহিঙ্গাকে আশ্রয় দিয়েছি। ফলে জনগণের মতামত বাংলাদেশের পক্ষে আছে। বাংলাদেশের পাবলিক ডিপ্লোমেসি এবং মিডিয়ায় মানবিক গ্রাউন্ডের প্রচারকে সামনে এনে জনমত গড়তে হবে। এ ছাড়া তাৎক্ষণিকভাবে আমাদের তেমন কিছু করণীয়ও নেই।’

বাংলাদেশ ইন্সটিটিউট অব ইন্টারন্যাশনাল অ্যান্ড স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজ (বিস) চেয়ারম্যান ও চীনে বাংলাদেশের সাবেক রাষ্ট্রদূত মুন্সী ফয়েজ আহমদ এ বিষয়ে যুগান্তরকে বলেন, ‘চীন, রাশিয়া কিংবা ভারত রোহিঙ্গাদের মানবিকতার বিপক্ষে যা করছে সেটা ঠিক হচ্ছে না।

সুচির বক্তব্য দেয়ার পর এখন তাদের মিয়ানমারকে বোঝানো উচিত। মিয়ানমারে তাদের বিনিয়োগ আছে। সেই বিনিয়োগকে নিরাপদ করার জন্য মিয়ানমারে শান্তি থাকা দরকার।

মিয়ানমারকে দোষী সাব্যস্ত করে তারা কী সুবিধা পাবে?’ তিনি আরও বলেন, ‘মিয়ানমারে চীন, রাশিয়া ও ভারতের বিনিয়োগে রোহিঙ্গারাও অবদান রাখতে পারেন। মিয়ানমারের ওপর তাদের প্রভাব আছে।

মিয়ানমারের অস্ত্র সরবরাহ থেকে শুরু করে বিনিয়োগ পর্যন্ত এই দেশগুলোই করে। ফলে মিয়ানমারকে সঠিক পথে আনতে তারা ভূমিকা রাখতে পারে। দেশগুলো মানবিকতার পক্ষে থেকেও মিয়ানমার থেকে সুযোগ নিতে পারে। এ বিষয়গুলো চীন, রাশিয়া ও ভারতকে বোঝানো উচিত।’

প্রসঙ্গত, মিয়ানমারের নিরাপত্তা চৌকিতে গত ২৫ আগস্ট জঙ্গি হামলার পর দেশটির সেনাবাহিনী রাখাইন রাজ্যে অভিযান শুরু করে।

অভিযানে সংখ্যালঘু রোহিঙ্গা মুসলমানদের হত্যা, ধর্ষণ, বাড়িঘরে আগুনসহ সব রকমের নিষ্ঠুরতা দেখায়। সেনা অভিযানে তিন হাজারের বেশি রোহিঙ্গাকে হত্যা করা হয়।

সেনাবাহিনীর নিষ্ঠুরতা ও বর্বরতা বিশ্বের বিবেকবান মানুষকে হতভম্ব করে দেয়। জাতিসংঘ মানবাধিকার প্রধান এটিকে জাতিগত নিধনের পাঠ্যবই উদাহরণ হিসেবে অভিহিত করেন।

উদ্ভূত পরিস্থিতিতে চার লাখ ১৯ হাজারের বেশি রোহিঙ্গা বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ করে। বেসরকারি হিসাবে এ সংখ্যা আরও অনেক বেশি। এই বিপুলসংখ্যক রোহিঙ্গা সামলাতে হিমশিম খাচ্ছে বাংলাদেশ। পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী বলেছেন, বাংলাদেশ এক নজিরবিহীন সংকটের মুখোমুখি।

জাতিসংঘ মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেস বর্বরতার নিন্দা জানিয়েছেন। তিনি নিরাপত্তা পরিষদের সভাপতিকে জরুরি বৈঠকের আহ্বান জানান। তার আহ্বানে সাড়া দিয়ে নিরাপত্তা পরিষদের জরুরি বৈঠক বসে।

এবং রাখাইনে সহিংসতা বন্ধের আহ্বান জানিয়ে বিবৃতি দেয়। তবে নিরাপত্তা পরিষদ মিয়ানমারের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা আরোপের মতো কড়া পদক্ষেপে যায়নি।

কারণ স্থায়ী সদস্য চীন ও রাশিয়ার ভেটো দেয়ার আশঙ্কা ছিল। রাখাইনে গণহত্যার বিরুদ্ধে মালয়েশিয়ায় গণ আদালতে শুনানি হচ্ছে।

রাখাইনে সংঘাতময় পরিস্থিতিতে গত ৬ সেপ্টেম্বর ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি মিয়ানমার সফর করেন।

সেখানে তিনি দেশটির রাষ্ট্রীয় উপদেষ্টা সুচির উদ্দেশে প্রকাশ্যে বক্তৃতায় বলেন, ‘রাখাইন রাজ্যে উগ্রপন্থী সহিংসতা নিয়ে আমরা আপনার উদ্বেগের সঙ্গে একমত পোষণ করি, বিশেষ করে নিরাপত্তা বাহিনীর বিরুদ্ধে সহিংসতা ও নিরপরাধ জীবন যেভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে তাতে।’ এরপর ১২ সেপ্টেম্বর মিয়ানমারের পক্ষে শক্ত অবস্থান নিয়ে আন্তর্জাতিক সমর্থন চায় চীন।

চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র গেং শুয়াং বলেন, মিয়ানমার সরকার তাদের জাতীয় উন্নয়নের জন্য শান্তি ও স্থিতিশীলতা বজায় রাখার যে চেষ্টা করছে, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের উচিত তার পাশে থাকা।

’ ১৫ সেপ্টেম্বর রাশিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক বিবৃতিতে বলা হয়, ‘মিয়ানমারের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপের চেষ্টা পরিস্থিতিকে আরও নাজুক করে তুলতে পারে।’

এতে আরও স্পষ্ট করে বলা হয়, ‘আমরা মিয়ানমার সরকারের পক্ষে আমাদের সমর্থন প্রকাশ করছি এবং সন্ত্রাসীদের প্ররোচনা এড়িয়ে চলতে সব ধর্মের নেতাদের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি।’
Source: http://mybangla24.com/jugantor_online_newspaper.php

No comments

Thanks for your valuable comment!