Header Ads

test

শিশুর চোখের সমস্যা?

সব শিশুই এমন হাসিখুশি সুস্থ থাকুক। ছবি: অধুনা
মো. শরিফুল ইসলাম
শিশুটি না বুঝেই বলল, ‘আমি কম দেখি।’ শিশু ঠিক বলছে কি না একটু লক্ষ করলেই বোঝা যাবে। একটি বিষয় হলো তার মা-বাবা লক্ষ করেন, টেলিভিশন দেখার সময় যতই তাকে পেছনের দিকে নিয়ে আসা হয়, সে সামনে চলে যায়। অর্থাৎ খুব কাছ থেকে টেলিভিশন দেখতে চায়।
অন্যটি হলো অনেক সময় স্কুল থেকে অভিযোগ আসে বাচ্চা ঠিকমতো ক্লাসনোট করে না বা ঠিকমতো মনোযোগ দেয় না। বোর্ডে লিখলে সেটি তুলতে পারে না। দেখা যায়, পরবর্তী দিন ঠিকমতো বাড়ির কাজ করে নিয়ে আসে না। তখন হয়তো তাঁরা বুঝতে পারেন বাচ্চার চোখে কোনো সমস্যা আছে। উন্নত দেশগুলোতে বাচ্চাদের চোখের সমস্যা বোঝার জন্য প্রি-স্কুল স্ক্রিনিং করা হয়।
এ বিষয়ে শহীদ সোহ্‌রাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের চক্ষুরোগ বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক হারুন-অর-রশীদ বলেন, বস্তুকে অস্পষ্ট বা ঝাপসাকে সাধারণত রিফ্রাকটিভ ইরর বা পাওয়ারজনিত দৃষ্টিস্বল্পতা বলা হয়। এটি সাধারণত চার ধরনের হয়—মায়োপিয়া (ক্ষীণদৃষ্টি), হাইপারোপিয়া (দূরদৃষ্টি), প্রেসবায়োপিয়া বা চালশে ও অ্যাসটিগমেটিজম। এর মধ্যে মায়োপিয়া বা ক্ষীণদৃষ্টি সাধারণত শিশুদের বেশি হয় বা দেখা যায়।
মায়োপিয়া বা ক্ষীণদৃষ্টি
এ ধরনের রোগীরা ‘কাছে’ ভালো দেখতে পারলেও দূরে ঝাপসা দেখে, তাই এদের ক্ষীণদৃষ্টি বলা হয়। শিশুরা সাধারণত এই সমস্যায় ভোগে। বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে চশমার পাওয়ার পরিবর্তিত হয়। অবতল লেন্স বা মাইনাস পাওয়ারের চশমা ব্যবহারে এ সমস্যার সমাধান সম্ভব। নিয়মিতভাবে ডাক্তারের পরামর্শে চোখের পাওয়ার পরীক্ষা এবং রেটিনার পরীক্ষা করিয়ে নেওয়া ভালো।
প্রথম কখন চোখ পরীক্ষা করাবেন?
যখন সমস্যা দেখা দেবে, তখন তো পরীক্ষা করাবেনই। সাধারণত শিশুর বয়স তিন বছর হলেই চোখ স্ক্রিনিং করানো উচিত। সমস্যা হলো, যদি এক চোখের দৃষ্টি ভালো এবং অন্য চোখে দৃষ্টি কম থাকে, তখন যেহেতু একটিকে ব্যবহার করছে, তাই অন্যটির প্রতি তার মনোযোগ থাকে না বা বুঝতে পারে না। এমনকি অনেক প্রাপ্তবয়স্ক ব্যক্তিও সমস্যাটি বুঝতে পারেন না। তাই স্ক্রিনিংটা কিন্তু এ জন্য খুব গুরুত্বপূর্ণ। আর যাদের চোখে দৃষ্টিজনিত সমস্যা ধরা পড়বে, তাদের ছয় মাস অন্তর অন্তর পাওয়ার পরীক্ষা করানো উচিত।
চিকিৎসা
চিকিৎসকের পরামর্শে রোগের ধরন অনুযায়ী পাওয়ার চেক করে চশমা ব্যবহার করা যেতে পারে।
চশমা যারা পড়তে চায় না, তারা কন্টাক্ট লেন্স ব্যবহার করতে পারে। কিন্তু কন্টাক্ট লেন্সের ব্যবহারবিধি একটু জটিল বিধায় অনেকের পক্ষে তা ব্যবহার করা হয়ে ওঠে না।
বর্তমানে লেজার সার্জারির মাধ্যমে এসব সমস্যার সমাধান সম্ভব। লেজার ব্যবহার করে চোখের পাওয়ার পরিবর্তন করে স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরিয়ে আনা যায়। সব রোগীর সব সময় ল্যাসিক করা সম্ভব হয় না, ডাক্তারের পরামর্শে কিছু পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর চোখ ল্যাসিক-যোগ্য হলেই একমাত্র ল্যাসিক সার্জারি করা হয়।
চোখের পাওয়ারের কন্টাক্ট লেন্স ব্যবহার করা কি ভালো?
স্বাভাবিক চোখের জন্য স্বল্প মেয়াদে কন্টাক্ট লেন্স পরা যেতে পারে। তবে চোখের কোনো রোগ থাকলে, চোখে পানি কম থাকলে, কন্টাক্ট লেন্স পরা ঠিক নয়।
মনে রাখতে হবে—
বাচ্চাদের দৃষ্টিস্বল্পতার তড়িৎ চিকিৎসা প্রয়োজন, না হয় অলস চোখের কারণে দৃষ্টিশক্তি স্থায়ীভাবে কমে যেতে পারে।
কাছ থেকে যেসব শিশু টেলিভিশন দেখে অথবা টেলিভিশন দেখার সময় চোখ ট্যারা হয়ে যায় এবং চোখ থেকে পানি পড়ে, তাদের তাড়াতাড়ি চোখ পরীক্ষা করিয়ে নেওয়া ভালো।
মাথাব্যথা চোখের পাওয়ার পরিবর্তনের লক্ষণ, সুতরাং মাথাব্যথা হলে একবার চোখ পরীক্ষা করিয়ে নিতে হবে।
যাদের ডায়াবেটিস আছে, তা নিয়ন্ত্রণে না থাকলে চশমা ব্যবহার করে খুব ভালো ফল পাওয়া যায় না। কারণ, এতে ঘন ঘন চোখের পাওয়ার পরিবর্তন হয়।
যারা নতুন নতুন চশমা ব্যবহার শুরু করবে, তাদের চশমায় অভ্যস্ত হতে ১০-১৫ দিন সময় লেগে যায়। এ সময়ে চশমা ব্যবহার অস্বস্তি লাগলেও এটি ব্যবহার বন্ধ করা ঠিক নয়।
যারা কন্টাক্ট লেন্স ব্যবহার করতে চায়, তারা অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শে ব্যবহারবিধি মেনে ব্যবহার করবে।
লেখক: চিকিৎসক

source: http://mybangla24.com/prothomalo-bangla-newspaper.php

No comments

Thanks for your valuable comment!