মিয়ানমারে সামরিক সরঞ্জাম বিক্রির কথা ভাবছে ভারত
পুলিশ চেকপোস্টে হামলার ঘটনায় রোহিঙ্গাদের ওপর হত্যা, ধর্ষণ ও বাড়িঘরে আগুন ও নির্যাতন শুরু করে মিয়ানমারে সেনাবাহিনী। জাতিগত নিধনের এ ঘটনার পর থেকেই পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে চার লাখেরও বেশি রোহিঙ্গা শরণার্থী। চলমান রোহিঙ্গা সংকটের মধ্যেই মিয়ানমারের কাছে ভারতের সামরিক সরঞ্জাম বিক্রির বিষয়ে আলোচনা চলছে। বৃহস্পতিবার বার্তা সংস্থা রয়টার্সের এক প্রতিবেদনে এমনটাই বলা হয়েছে। রোহিঙ্গাদের ওপর নির্যাতনের পর সমালোচনার মুখে পড়া মিয়ানমারের প্রতি ভারতের সমর্থনের জোরালো ইঙ্গিত হিসেবে দেখা হচ্ছে এ আলোচনাকে।
রাখাইনে রোহিঙ্গা নির্যাতনের কারণে যুক্তরাজ্য মিয়ানমারের সঙ্গে সব ধরনের সামরিক কার্যক্রম বন্ধ ঘোষণার পরে দেশটিতে সামরিক সরঞ্জাম বিক্রির বিষয়ে আলোচনার কথা জানাল ভারত।
মিয়ানমারের নৌপ্রধানের নয়াদিল্লি সফরে অস্ত্রের সরবরাহের বিষয়ে আলোচনা হয়েছে বলে ভারতীয় কর্মকর্তাদের বরাত দিয়ে রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে। গত বুধবার ভারতের প্রতিরক্ষামন্ত্রী নির্মলা সীতা রমণ এবং দেশটির সেনা, নৌ ও বিমানবাহিনীর প্রধানের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন মিয়ানমার নৌবাহিনীর কমান্ডার-ইন-চিফ অ্যাডমিরাল টিন অং সান। খবরে বলা হচ্ছে, মিয়ানমারের সঙ্গে ভারতের সামরিক সহযোগিতা বৃদ্ধির আলোচনার সিদ্ধান্ত দৃশ্যত এ অঞ্চলে চীনের প্রভাবের বিপরীতে নিজেদের দাঁড়ানোর চেষ্টার অংশমাত্র।
দুই পক্ষের মধ্যে সমুদ্র উপকূলবর্তী এলাকায় টহল নৌযান সরবরাহের বিষয়ে আলোচনা হয় বলে ভারতের একজন সেনা কর্মকর্তা জানিয়েছেন। ভারতের ওই সেনা কর্মকর্তা আরও বলেন, ‘মিয়ানমার আমাদের পূর্বমুখী নীতির একটি স্তম্ভ এবং সম্পর্কের একটি বড় জায়গা হলো প্রতিরক্ষা।’
নয়াদিল্লি ভিত্তিক অবজারভার রিসার্চ ফাউন্ডেশনের ভারতের প্রতিবেশী নীতি বিশেষজ্ঞ কে. ইওমে বলেছেন, ‘আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় যখন মিয়ানমার সেনাবাহিনীর সমালোচনা করছে সে সময় উচ্চ পর্যায়ের সামরিক কর্মকর্তাদের সঙ্গে ভারত সরকারের বৈঠক একটি বার্তা দিচ্ছে। আর বার্তাটি হচ্ছে, রোহিঙ্গা ইস্যুতে উদ্বেগ থাকলেও ভারত আছে মিয়ানমার সরকারের সঙ্গে ।’
২০১৩ সালে অস্ত্র সরবরাহের জন্য ভারতের সঙ্গে আলোচনা করে মিয়ানমার। এরপরই সরবরাহ করা হয় অস্ত্র। মিয়ানমার সেনাবাহিনীর কাছে সরবরাহ করা অস্ত্রের মধ্য আছে বন্দুক, রাডারসহ নানান অস্ত্র। এ অস্ত্রের সরবরাহের পর থেকে এ অঞ্চলে চীনের প্রভাবে কিছু ধাক্কা লাগে।
দেশ দুটি চাচ্ছে বঙ্গোপসাগর এলাকায় দুই দেশের নৌবাহিনী একসঙ্গে কাজ করুক। এতে করে উভয় পক্ষের সমন্বিত টহল ব্যবস্থা আরও বৃদ্ধি হবে বলে আশা করা হচ্ছে।
ভারতের দিল্লি ভিত্তিক অবজারভার রিসার্চ ফাউন্ডেশনের ভারতে প্রতিবেশী নীতি বিষয়ে বিশেষজ্ঞ কে. ইহোমে বলেন, ভারত সরকার এমন সময়ে উচ্চ পর্যায়ের সামরিক কর্মকর্তাদের এ বৈঠক করল যখন আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় মিয়ানমারের সমালোচনা করছে। এ বৈঠক একটি বার্তাও দেয়। আর এ বার্তাটি হচ্ছে যে, রোহিঙ্গা সংকটের মুখে ভারত এখন পর্যন্ত মিয়ানমার সরকারের সঙ্গেই আছে।’
১৯৯০ থেকে ২০১৬ সাল পর্যন্ত আল-জাজিরার এক বিশ্লেষণে দেখা গেছে, মিয়ানমার সেনাবাহিনী সবচেয়ে বেশি অস্ত্র কেনে রাশিয়া ও চীনের কাছ থেকে। এ ছাড়া ভারত, ইসরায়েল, ইউক্রেনও মিয়ানমারের বড় অস্ত্র সরবরাহকারী দেশ। ১৯৯০ থেকে ২০১৬ সাল পর্যন্ত মিয়ানমার সেনাবাহিনী সবচেয়ে বেশি যুদ্ধবিমান কিনেছে চীনের কাছ থেকে। চীন থেকে ১২০টি যুদ্ধবিমান কিনেছে মিয়ানমার। রাশিয়া থেকে ৬৪, পোল্যান্ড থেকে ৩৫টি, জার্মানি থেকে ২০টি, সাবেক যুগোস্লাভিয়া থেকে ১২টি, ভারত থেকে ৯টি, সুইজারল্যান্ড থেকে ৩টি ও ডেনমার্ক থেকে ১টি যুদ্ধবিমান কিনেছে মিয়ানমার সেনাবাহিনী।
এই সময় পর্যন্ত মিয়ানমারে সবচেয়ে বেশি ক্ষেপণাস্ত্র সরবরাহকারী দেশ হলো রাশিয়া। রাশিয়া থেকে মিয়ানমার কিনেছে ২ হাজার ৯৭১টি ক্ষেপণাস্ত্র। এরপরেই রয়েছে চীন। চীনের কাছ থেকে কিনেছে ১ হাজার ২৯টি ক্ষেপণাস্ত্র। বেলারুশ থেকে ১০২টি, বুলগেরিয়া থেকে ১০০টি ও ইউক্রেন থেকে ১০টি ক্ষেপণাস্ত্র কিনেছে মিয়ানমার।
গত ২৫ আগস্ট রাখাইনে পুলিশ ও সেনাবাহিনীর বেশ কয়েকটি চৌকিতে হামলা হয়। এর জের ধরে সেখানে সহিংস অভিযান শুরু করে মিয়ানমারের সেনা ও পুলিশ। গুলি-আগুনে নিহত হয় অন্তত এক হাজার রোহিঙ্গা। অভিযানের মুখে প্রাণভয়ে সোয়া চার লাখ রোহিঙ্গা পালিয়ে বাংলাদেশে এসেছে। রাখাইনে কিছু রোহিঙ্গা এখনো থাকলেও তারা খাদ্যসংকটে পড়েছে। এমন সময়ে মিয়ানমারের কাছে ভারতের অস্ত্রে সরবরাহের খবর পাওয়া গেল।
Source: www.prothom-alo.com/international/article/1329276/মিয়ানমারে-অস্ত্র-সরবরাহ-করবে-ভারত
Post a Comment