ভারতের কেরালায় বান্ধবীকে 'আলিঙ্গন' করায় শাস্তি পেল স্কুল ছাত্র
সেন্ট টমাস সেন্ট্রাল স্কুলের অ্যাসেমব্লি। |
বান্ধবী স্কুলের প্রতিযোগিতায় খুব ভাল গান গেয়েছিল, তাই তাকে আলিঙ্গন করেছিল দ্বাদশ শ্রেণীর ছাত্রটি।
ছাত্রটির দাবি, একবছরের ছোট বান্ধবীকে অভিনন্দন জানাতেই জড়িয়ে ধরেছিল সে।
স্কুল কর্তৃপক্ষ বলছে, অভিনন্দন জানানোর জন্য অতক্ষণ ধরে আলিঙ্গনটা বাড়াবাড়ি।
"অভিনন্দন জানাতে হলে দুতিন সেকেন্ডের জন্য কেউ আলিঙ্গন করছে, সেটা মানা যায়। কিন্তু ওই ছাত্র-ছাত্রী এতক্ষণ ধরে আলিঙ্গন করেছিল যে শিক্ষকদের এগিয়ে এসে সরিয়ে দিতে হয়েছিল দুজনকে," বলছেন কেরালার রাজধানী থিরুভনন্তপুরমের নামজাদা সেন্ট টমাস সেন্ট্রাল স্কুলের প্রিন্সিপাল সেবাস্টিয়ান জোসেফ।
শুধু আলিঙ্গনেই শেষ হয় নি ব্যাপারটা। বান্ধবীকে অভিনন্দন জানানোর সেই ছবি আবার ইনস্টাগ্রামে পোস্টও করেছিল ঐ ছাত্র।
একই স্কুলে, এক ক্লাস নীচে পড়ে ছাত্রীটি। দুজনেরই দাবি, তারা দুই পরিবারের সম্মতি নিয়েই মেলামেশা করে বেশ কিছুদিন ধরেই।
তবে এতক্ষণ ধরে 'অভিনন্দন' জানাতে 'আলিঙ্গন' করাটা স্কুল কর্তৃপক্ষের পছন্দ হয় নি, তাই শাস্তিমূলক ব্যবস্থা হিসাবে ছাত্র আর ছাত্রী - দুজনকেই সাসপেন্ড করেছিল স্কুল। শুরু হয়েছিল নিজস্ব তদন্ত।
ঘটনাটা জুলাই মাসের। কিন্তু সম্প্রতি কেরালা হাইকোর্ট স্কুলের ওই সিদ্ধান্তের পক্ষেই রায় দেয়ায় বিষয়টি নিয়ে বিতর্ক শুরু হয়েছে।
দুই শিক্ষার্থীর বাড়াবাড়ি রকমের আলিঙ্গন ভাল লাগেনি প্রিন্সিপাল সেবাস্টিয়ান জোসেফের। |
স্কুল প্রিন্সিপাল সেবাস্টিয়ান জোসেফ বলছেন, "এধরণের অনিয়মের ব্যাপারে স্কুলের নিয়ম অনুযায়ী তদন্ত কমিটি গড়া হয়েছিল। গোড়ায় আমরা কিছুটা নমনীয় মনোভাব নিয়েই চলছিলাম, ছাত্রটিকে একটা পরীক্ষাও দিতে দিয়েছি।"
"কিন্তু ছাত্রটির পরিবার একেবারেই সহযোগিতা করছিল না। তারা নানা ধরণের প্রশ্ন তুলতে শুরু করে, শিশু সুরক্ষা কমিশনেও গিয়েছিল তারা। আমরা সেই কমিশনের নির্দেশের বিরুদ্ধে হাইকোর্টে আবেদন জানাই। স্কুলের পক্ষেই রায় দিয়ে আদালত বলেছে যে স্কুলের অনুশাসন অনুযায়ী ব্যবস্থা নিতে পারি আমরা।"
তবে ঐ ছাত্র আর তার পরিবার এখন হাইকোর্টের ডিভিশন বেঞ্চে আবেদন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
তারা বলছে, ছবিগুলো ইনস্টাগ্রামে পোস্ট করা হয়েছিল, প্রাইভেসি সেটিংসহ। স্কুল কর্তৃপক্ষ অ্যাকাউন্ট হ্যাক করে, অথবা ইনস্টাগ্রামের স্ক্রিন শট নিয়ে আদালতে জমা দিয়েছে। এটা বেআইনি। ছেলেমেয়ে দুটিকে বদনাম করার জন্য স্কুল এসব করছে।
এতদিন পর একটি জাতীয় টিভি চ্যানেলের কাছে মুখ খুলেছে ছাত্র এবং ছাত্রী - দুজনেই।
ছাত্রীটি বলেছে, "মাত্র কয়েক সেকেন্ডের জন্য ও আমাকে জড়িয়ে ধরেছিল। ও আমার খুব ভাল বন্ধু। তাই কোনোরকম অস্বস্তি হয় নি ব্যাপারটাতে। কিন্তু স্কুল কর্তৃপক্ষ ব্যাপারটা নিয়ে জটিলতা তৈরি করেছে। তারা আমার মাকেও ডেকে বলেছে যে আমাকে নাকি মা ঠিক মতো মানুষ করে নি।"
ছাত্রটির বাবা-মা বেশী চিন্তিত কয়েক মাস পরে তার দ্বাদশ শ্রেণীর বোর্ড পরীক্ষা নিয়ে।
পরীক্ষায় বসার আবেদনও করেছিলেন তারা স্কুলের কাছে। কিন্তু স্কুল বলছে, জাতীয় বোর্ডের অনুমতি আনতে হবে, কারণ ওই ছাত্রটির উপস্থিতির হার যথেষ্ট কম রয়েছে।
http://www.bbc.com/bengali/news-42425017
Post a Comment