রোহিঙ্গা নির্মূলে ইসরাইলি ট্যাঙ্ক
রোহিঙ্গা নির্মূলে ইসরাইলি ট্যাঙ্ক |
মুসলিম নির্মূলে মিয়ানমারের আর্মি ইসরাইলি সহযোগিতা নিচ্ছে। ইসরাইল মিয়ানমারের সামরিক বাহিনীকে প্রশিক্ষণসহ অন্যান্য সহযোগিতা করে যাচ্ছে। সম্প্রতি জানা গেছে, ইসরাইল মিয়ানমারকে এক শ’র বেশি অত্যাধুনিক ট্যাংক সরবরাহ করেছে দেশটিতে অস্ত্র সরবরাহে নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও। ইতোমধ্যে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন মিয়ানমারে অস্ত্র সরবরাহে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে। নিষেধাজ্ঞার মধ্যেই ইহুদিবাদী দেশ ইসরাইল মিয়ানমারকে আধুনিক অস্ত্র দিয়ে যাচ্ছে। মিয়ানমারে মানবাধিকার লঙ্ঘনে ইসরাইলি অস্ত্র ব্যবহৃত হতে পারে এমন আশঙ্কায় ইসরাইলের কিছু আইনজীবী ও মানবাধিকার গ্রুপ আনুষ্ঠানিক আবেদনে মিয়ানমারে অস্ত্র সরবরাহ বন্ধ করতে বলেছে। আন্তর্জাতিক মিডিয়াগুলো বলছে, রোহিঙ্গা নির্মূলে ইসরাইল মিয়ানমার আর্মিকে সহায়তা করে যাচ্ছে। বলা হচ্ছে ইসরাইলি অস্ত্র সরবরাহের জোরেই মিয়ানমার আর্মি দ্বিগুণ উৎসাহে রোহিঙ্গা জাতিকে উৎখাতে নেমে পড়েছে।
মিয়ানমারের সাথে ইসরাইলের সম্পর্ক অবশ্য নতুন নয়। সেই ৫০-এর দশকের মাঝামাঝিতে ইসরাইল মিয়ানমারকে ৩০টি পুরনো সুপারমেরিন স্পিট ফাইটার দিয়েছিল যন্ত্রপাতিসহ। একই সাথে মিয়ানমার ইসরাইল থেকে পেয়েছে মেশিনগান, বোমা, রকেট লাঞ্চার এবং খুচরা যন্ত্রাংশ। এ সময়েই ইসরাইলি বিমানবাহিনী তখনকার বার্মার বিমানবাহিনীর ছয়জন অফিসারকে প্রশিক্ষিত করে দিয়েছে এবং বার্মার বিমানবাহিনী যেন এসব বিমান নিজেরাই মেরামত করতে পারে সে জন্য টেকনিক্যাল টিমও পাঠিয়েছে। তখনই ইসরাইল বার্মার আর্মিকে আধুনিকায়ন করে দেয়ার প্রচেষ্টা শুরু করে। তখন সম্পর্ক এতই উষ্ণ হয় যে ১৯৫৮ সালে ইসরাইলের সামরিকবাহিনীর চিফ অব স্টাফ মোশে দায়ান এবং প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের তৎকালীন মহাপরিচালক শিমন পেরেজ (পরে ইসরাইলের প্রেসিডেন্ট) বার্মা সফরে আসেন। এর পরের বছরই বার্মার জেনারেল নে উইন ইসরাইল সফরে যান। তিনি ছিলেন তখনকার বার্মার কেয়ারটেকার সরকারের প্রধানমন্ত্রী ও সামরিক বাহিনীর চিফ অব স্টাফ।
তবে এসব দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক ও যোগাযোগ থাকার পরও ১৯৬২ সালে বার্মায় বিপ্লবী সরকার ক্ষমতায় আসার পর থেকে ইসরাইলের সাথে উষ্ণ সম্পর্কে কিছুটা শীতল হয়। ইসরাইলের সাথে শীতল সম্পর্ক বজায় থাকে ১৯৭৪ পর্যন্ত। অবশ্য এরপরও নে উইনের বার্মার সমাজবাদী সরকারের সময় দৃশ্যত ইসরাইলের সাথে সম্পর্কের খুব বেশি উন্নয়ন হয়নি যদিও তখনো বার্মার শীর্ষ কিছু আর্মি অফিসারের হৃদয়ে ইসরাইলের স্থান ছিল যারা তরুণ বয়সে ইসরাইলি সহযোগিতা পেয়েছিলেন এবং যাদের সাথে ইসরাইলিদের গাঢ় সম্পর্ক ছিল। তবে ১৯৮৮ সালে নে উইনের সরকারকে হটিয়ে প্রকাশ্যে সামরিক বাহিনী ক্ষমতা গ্রহণের পর আবারো অন্যান্য দেশ যেমন চীন, রাশিয়া, যুগোশ্লাভিয়া, পোল্যান্ডের সাথে গোপনে সামরিক সম্পর্ক স্থাপন করা হয়। দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্য যে তখনকার বার্মার সাথে মুসলিম দেশ পাকিস্তানেরও গাঢ় সম্পর্ক তৈরি হয় এবং পারমাণবিক শক্তিধর এ দেশটি বার্মাকে সামরিক সহায়তা দিয়েছে নানাভাবে। এমনকি সিঙ্গাপুরও বার্মাকে সামরিক সহায়তা দিয়েছে। ১৯৮৮ সালে নে উইনকে সরানোর পর বিশ্বব্যাপী যখন নিন্দা, প্রতিবাদ ও অবরোধ আরোপের ঘটনা ঘটে তখন সামরিক জান্তা প্রথমে যে দেশ দু’টির সাথে সামরিক যোগাযোগ করে তার একটি সিঙ্গাপুর।
১৯৮৮ সালের পর প্রথম যে অস্ত্র সরবরাহটি মিয়ানমারে আসে তা আসে সিঙ্গাপুর থেকেই। ১৯৮৯ সালে দ্বিতীয় যে অস্ত্র সরবরাহটি এসেছিল তা আসে বেলজিয়াম ও ইসরাইল থেকে। জাহাজভর্তি এসব সরবরাহে অস্ত্রের বৈচিত্র্য ছিল। সিঙ্গাপুর থেকে আসে ৪০ মিলিমিটারের আরপিজি-২ গ্রেনেড লঞ্চার, ৫৭ মিলিমিটারের অ্যান্টি ট্যাঙ্ক গান। এসব অস্ত্রের অরিজিন ছিল ইসরাইল।
মিয়ানমারের সামরিক বাহিনীকে মারাত্মক কিছু অস্ত্রের জন্য প্রযুক্তি হস্তান্তর করার অভিযোগও রয়েছে ইসরাইলের বিরুদ্ধে। ১৯৯১ সালে সামরিকবাহিনীর একটি প্রতিনিধিদল ইসরাইল সফরে গেলে তারা ইসরাইল থেকে ৯ মিলিমিটারের উজি সাব মেশিনগান তৈরির প্রযুক্তি হস্তান্তরে ইসরাইলকে রাজি করায়। মিয়ানমারের সামরিকবাহিনী এখন এসব অস্ত্রের আদি ‘ভার্সন’ তৈরির চেষ্টা করছে। এরা আরো উন্নয়ন করছে ৫.৫৬ ইনফ্যান্ট্রি নামক মারণাস্ত্রের। মিয়ানমারের মধ্যাঞ্চলে সামরিক কারখানায় ইসরাইলের লাইট মেশিন গান, ৫.৫৬ মিলিমিটারের ইসরাইলি গ্যালিল অ্যাসল্ট রাইফেল তৈরি হচ্ছে।
বিভিন্ন মাধ্যমে খবর বেরিয়েছে যে, ইসরাইলি গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদ মিয়ানমারের ডিডিএসআইকে (ডিরেক্টরেট অব ডিফেন্স সার্ভিসেস ইন্টেলিজেন্স) প্রশিক্ষণ দিচ্ছে এবং একই সাথে টেকনিক্যাল সাপোর্ট করছে। মিয়ানমারের ডিডিএসআই গোয়েন্দা কার্যক্রম, অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তার স্বার্থে দেশটিতে বিশেষ অপারেশন পরিচালনার কাজও করে থাকে। যেমন বর্তমান আরাকান রাজ্যে কয়েক শ’ বছরের পুরনো ইতিহাসসমৃদ্ধ আরাকানি মুসলিমদের (যারা রোহিঙ্গা নামে পরিচিত) নির্মূলে ইসরাইলি বাহিনীর তৎপরতা রয়েছে বলে খবর বেরিয়েছে। ইসরাইল মিয়ানমার সামরিক বাহিনীর যোগাযোগ নেটওয়ার্ককে আধুনিকায়ন, সিগন্যালস ইন্টেলিজেন্সের সামর্থ্য বাড়াতেও সহয়তা করছে বলে অভিযোগ রয়েছে। সামরিকবাহিনীর বিভিন্ন জার্নালে এসব খবরও বেরিয়েছে যে ইসরাইলের সাথে সিঙ্গাপুর মিলে মিয়ানমারের আর্মির ‘স্পেশালাইজড ইন্টারসেপ্ট অ্যান্ড অ্যানক্রিপশন ইকুইপমেন্ট’ প্রশিক্ষণ দিচ্ছে। সম্ভবত ইসরাইলি আর্মি অথবা ইসরাইলি আর্মির সাবেক বিশেষজ্ঞরা মিয়ানমারের ‘এলিট কাউন্টার টেরোরিস্ট স্কোয়াড’কে প্রশিক্ষিত করে দিয়েছে।
তবে আন্তর্জাতিক মিডিয়া, ডিফেন্স জার্নালে প্রকাশিত এসব খবরকে ইসরাইল সব সময় অতিরঞ্জিত বলে উল্লেখ করে উড়িয়ে দিয়েছে। ডিফেন্স জার্নালগুলোতে পরিষ্কার করেই বলছে যে মিয়ানমারের সামরিকবাহিনী উল্লিখিত ইসরাইলি অস্ত্রগুলো সরাসরি সহায়তা (ডাইরেক্ট হেল্প) হিসেবেই পেয়ে আসছে।
মিয়ানমার শুধু যে ইসরাইল থেকে উপরে উল্লিখিত অতি আধুনিক অস্ত্রই পেয়েছে তা নয়, চীন থেকে পাওয়া ৫৪টি জঙ্গি বিমানের (এফ-৭ ফাইটার, এফটি-৭ ট্রেইনার) উন্নয়নের ঠিকাদারিও পেয়েছে ইসরাইলি কোম্পানি। ১৯৯৭ থেকে ২০০০ সালের মধ্যে এসব চুক্তি হয়েছে। এর সাথে চীনের সরবরাহকৃত ৩৫০ পিএল-২এ আকাশ থেকে আকাশে নিক্ষেপযোগ্য মিসাইলের উন্নয়নের ঠিকাদারিও ইসরাইলি কোম্পানি পেয়েছে বলে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে খবর বেরিয়েছে। চীন নির্মিত এসব বিমানের কিছু সমস্যা দেখা দিয়েছে যেগুলোর সমাধান চীন থেকে পাওয়া যাচ্ছে না। এসব কারণে বার্মিজ আর্মি ইসরাইলিদের নিয়োগ দিয়েছে এসব উন্নয়নের জন্য।
হামিম উল কবির
১৪ সেপ্টেম্বর ২০১৭,বৃহস্পতিবার, ১৪:১৪
Source: http://mybangla24.com/naya_diganta_bangla-newspaper.php
Post a Comment