তিন বছরের মেয়ে ও সম্পত্তি ছেড়ে সন্ন্যাসীর পথে দম্পতি
একশ' কোটি টাকারও বেশি সম্পত্তি ও তিন বছরের মেয়েশিশুসহ নিজেদের সবকিছু ছেড়ে সন্ন্যাসী হতে চলেছেন ভারতের মধ্যপ্রদেশের এক জৈন দম্পতি। তাদের এই সিদ্ধান্তে শুধু পরিবার নয়, হতবাক স্থানীয় সম্প্রদায়ও। সন্ন্যাসী হওয়ার প্রথম ধাপ হিসেবে ২৩ সেপ্টেম্বর ভারতের সুধামার্গি জৈন আচার্য রামলাল মহারাজের কাছে তারা দীক্ষা নেবেন।
৩৫ বছরের সুমিত রাঠৌর এবং তার ৩৪ বছরের স্ত্রী অনামিকা। ধনী পরিবারের এই দম্পতির বছর চারেক বিয়ে হয়েছে। মধ্যপ্রদেশের নিমাচের বাসিন্দা তারা। অনামিকা হলেন নিমাচের প্রথম গোল্ড মেডালিস্ট। অষ্টম শ্রেণির বোর্ডের পরীক্ষায় তিনি এই সম্মান পান। পরে রাজস্থানের মোদী ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ থেকে পাস করে হিন্দুস্তান জিঙ্কে কাজ শুরু করেন। অন্য দিকে সুমিত লন্ডন থেকে এক্সপোর্ট-ইমপোর্ট ম্যানেজমেন্টে ডিপ্লোমা করেছেন। সেখানেই দু'বছর থাকার পর পারিবারিক ব্যবসা সামলাতে নিমাচে ফিরে আসেন।
২২ অাগস্ট সুমিত ও তার পরিবার সুরাতে জৈন আচার্য রামলালের এক অনুষ্ঠানে যান। সেখানেই সুমিত তার সিদ্ধান্তের কথা আচার্যকে জানান। আচার্য রামলাল স্ত্রীর অনুমতি চাইতে বললে অনামিকা জানান, তিনিও সন্ন্যাসী হতে চান। সুমিত বা অনামিকা অবশ্য তাদের পরিবারের কাছে আগেই সন্ন্যাসী হওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করেছিলেন। বেশ কয়েক মাস আগে থেকেই তারা সন্ন্যাসী হওয়ার প্রস্তুতি শুরুও করে দিয়েছিলেন।
অনামিকার বাবা অশোক চান্ডালিয়া যিনি এক সময়ে মধ্যপ্রদেশের নিমাচের বিজেপির জেলা সভাপতি ছিলেন। তিনি জানান, অনামিকা-সুমিতের মেয়ে ইভিয়া যখন মাত্র ৮ মাসের, তখন থেকে তারা এই পথে হাঁটার ইচ্ছাপ্রকাশ করেন। তখন থেকেই আলাদা থাকতে শুরু করেন। দু'জনের পরিবারই আপ্রাণ চেষ্টা করে তাদের বোঝানোর, কোনও লাভ হয়নি।
কী হবে তাদের তিন বছরের ওই শিশুর? নাতনির সমস্ত দায়িত্ব নিতে প্রস্তুত বলে জানিয়েছেন অনামিকার বাবা অশোক চান্ডালিয়া। নিমাচের জৈন সম্প্রদায়ের সদস্য এবং সাধুমার্গি জৈন সেবক সঙ্ঘের সম্পাদক প্রকাশ ভাণ্ডারী তাদের এই সিদ্ধান্তে হতভম্ব। তার মতে, 'সন্ন্যাস নেওয়ার ঘটনা আমাদের সম্প্রদায়ে খুবই স্বাভাবিক। কিন্তু এত কম বয়সে কোনও দম্পতি সব ছেড়ে সন্ন্যাসী হতে চলেছেন, এমন ঘটনা এই প্রথম ঘটতে চলেছে।'
সুমিতদের এই সিদ্ধান্ত মনে করিয়ে দিচ্ছে বর্ষিলের কথা। চলতি বছরের জুন মাসে যা ভারতে আলোড়ন ফেলে দিয়েছিল। সেই সময়ে বর্ষিল শাহ নামে ১৭ বছরের এক কিশোর সন্ন্যাসী হওয়ার ইচ্ছাপ্রকাশ করে। বর্ষিল তার দ্বাদশ শ্রেণির পরীক্ষায় ৯৯.৯ শতাংশ নম্বর পেয়ে উত্তীর্ণ হন। দ্বাদশ শ্রেণির ফল প্রকাশ হওয়ার পর তার সহপাঠীরা যখন ডাক্তার বা ইঞ্জিনিয়ার বা গবেষক হওয়ার কথা ভাবছেন, তখন সব ছেড়ে বর্ষিল জৈন সন্ন্যাসী হওয়ার পথ বেছে নেন। খবর-আনন্দবাজার পত্রিকা।
ইত্তেফাক/জামান
সূত্র: http://mybangla24.com/ittefaq_bangla_online_newspaper.php
Post a Comment