Header Ads

test

বাংলাদেশে নতুন রোহিঙ্গা শরণার্থী তিন লাখ ছাড়াবে



মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে সেনাবাহিনীর বিতাড়ন অভিযানের মুখে প্রাণ বাঁচাতে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গার সংখ্যা তিন লাখ ছাড়িয়ে যেতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন জাতিসংঘ কর্মকর্তারা।

 জাতিসংঘের হিসাব মতে, গত ১২ দিনে এক লাখ ৪৬ হাজার রোহিঙ্গা শরণার্থী বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে। তারা কক্সবাজার উপকূলের বিভিন্ন উপজেলার শরণার্থী শিবির, জঙ্গল ও সড়কের পাশে খোলা জায়গায় আশ্রয় নিয়েছে।

মিয়ানমার থেকে কক্সবাজারে আসা এক রোহিঙ্গা অধিকার কর্মীর বরাতে বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানিয়েছে, রাখাইন থেকে হাজার হাজার মানুষ বাংলাদেশ সীমান্তের দিকে যাত্রা শুরু করেছে।

ওই কর্মী আরও বলেন, এটি এমন এক অবস্থা যা আগে কখনো দেখিনি, এমনকি কোনো সিনেমাতেও দেখিনি।

এই রোহিঙ্গা কর্মী মংডু থেকে আসার পথে শরণার্থীদের যাত্রার চিত্র তার মোবাইল ফোনের ক্যামেরায় ভিডিও করেন।

এতে দেখা গেছে, মংডুর লং ডন গ্রামের একটি নদী পার হচ্ছে শত শত মানুষ। ছোট্ট দুটি ফেরি, এত মানুষ পারাপার করতে হিমশিম খাওয়ায় তাদের অনেকেই সাঁতরে নদীটি পার হচ্ছে।

কক্সবাজার উপকূলের রোহিঙ্গা শরণার্থীদের জন্য কর্মরত জাতিসংঘের বিভিন্ন সংস্থার কর্মকর্তারা রয়টার্সকে জানিয়েছেন, যেসব শরণার্থী এসে পৌঁছেছে তারা সবাই ক্ষুধার্ত ও মানসিকভাবে বিধ্বস্ত। তাদের জন্য জরুরি ভিত্তিতে খাদ্যের প্রয়োজন বলে জানিয়েছেন কর্মকর্তারা।

বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচির (ডব্লিউএফপি) বাংলাদেশের মুখপাত্র দীপায়ন ভট্টাচার্য বলেন,এখানে যারা শরণার্থী হিসেবে আসছে, তাদের অধিকাংশই পুষ্টিহীনতার সমস্যায় ভুগছে। সম্ভবত এক মাসেরও বেশি সময় তারা প্রয়োজনমতো খাবার পায় না। সত্যিকার অর্থে তাদের ক্ষুধার্ত ও ভীত-সন্ত্রস্ত দেখাচ্ছে।

তিনি বলেন, জাতিসংঘ কর্মকর্তারা প্রাথমিকভাবে ধারণা করেছিলেন এক লাখ ২০ হাজার শরণার্থী বাংলাদেশে আসতে পারে। এখন তারা মনে করছেন এ সংখ্যা তিন লাখে পৌঁছাতে পারে।

ডব্লিউএফপির কর্মকর্তা দ্বীপায়ন উল্লেখ করেন, বিপুলসংখ্যক শরণার্থী নৌকা ছাড়াও বাংলাদেশ-মিয়ানমারের স্থলসীমান্তের বিভিন্ন জায়গা দিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করছে।

এ পরিস্থিতিতে সব পক্ষকে দ্রুত পদক্ষেপ নেয়ার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, যদি তারা দ্রুত এ ব্যাপারে এগিয়ে না আসে তা হলে এসব মানুষ (শরণার্থী) খাদ্য নিয়ে নিজেদের মধ্যে মারামারি শুরু করবে- এমন পরিস্থিতি আমাদের হয়তো দেখতে হবে। ফলে সেখানে নানা অপরাধ এবং নারী ও শিশুর প্রতি সহিংসতা জন্ম নেবে।

এদিকে জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদকে উদ্দেশ করে মঙ্গলবার পাঠানো এক বিরল চিঠিতে সংস্থাটির মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেস রোহিঙ্গা সঙ্কটে মানবিক বিপর্যয়ের আশঙ্কার কথা জানান।

এতে তিনি বলেন, মিয়ানমার থেকে পালিয়ে বিপুলসংখ্যক রোহিঙ্গা বাংলাদেশে আসায় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গিয়ে সঙ্কট মানবিক বিপর্যয়ে রূপ নিতে পারে।

এ ছাড়া রাখাইনে রোহিঙ্গাদের ওপর নিরাপত্তা বাহিনীর কঠোর অভিযানের ফলে আরও ব্যাপক এলাকাজুড়ে অস্থিতিশীলতা ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা করেন জাতিসংঘ মহাসচিব।

উল্লেখ্য, গত ২৫ আগস্ট ভোররাত থেকে রাখাইনে সীমান্তরক্ষী পুলিশের সঙ্গে আরাকান রোহিঙ্গা স্যালভেশন আর্মির (আরসা) সদস্যদের সংঘাত শুরু হয়। এতে শতাধিক ব্যক্তি নিহত হন। এর মধ্যে ১২ জন নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্য ও বাকিরা আনসার সদস্য ছিল।

এ ঘটনার পর মিয়ানমারের সরকারি বাহিনী বিতাড়ন অভিযান শুরু করে। তারা রোহিঙ্গাদের গ্রামগুলোতে হানা দিয়ে সাধারণ মানুষকে লক্ষ্য করে নির্বিচারে গুলিবর্ষণ করছে এবং ২৬শ বাড়িঘর পুড়িয়ে দিয়েছে বলে মানবাধিকার সংস্থাগুলো অভিযোগ করেছে।

অভিযানকালে অন্তত ৪০০ রোহিঙ্গা নিহত হন, যাদের বেশিরভাগই সাধারণ নিরস্ত্র রোহিঙ্গা। এদিকে অভিযানের মুখে প্রাণ বাঁচাতে প্রায় দেড় লাখ রোহিঙ্গা পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে।

No comments

Thanks for your valuable comment!