আন্তর্জাতিক ঘোষণায় স্বাক্ষরে অস্বীকৃতি ভারতের
রোহিঙ্গা ইস্যুতে মিয়ানমারের বিরুদ্ধে একটি আন্তর্জাতিক যৌথ ঘোষণায় স্বাক্ষর করতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে ভারত। রোহিঙ্গা সংকটে এখন পর্যন্ত কোনো বাক্য খরচ করেনি এ অঞ্চলের অন্যতম ক্ষমতাধর দেশ চীন।
প্রতিবেশী দেশটি মানবিক সংকটের মুখে পড়লেও চীনের নেতৃত্ব তা নিয়ে ভাবছে না। এদিকে বাংলাদেশের সঙ্গে নিজেদের সীমান্ত আরও নিশ্ছিদ্র করবে মিয়ানমার।
ভারতের অস্বীকৃতি : রোহিঙ্গা ইস্যুতে মিয়ানমারের বিরুদ্ধে একটি আন্তর্জাতিক যৌথ ঘোষণায় স্বাক্ষর করতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে ভারত। বৃহস্পতিবার ইন্দোনেশিয়ার বালির নুসা দুয়া অবকাশযাপন কেন্দ্রে ওয়ার্ল্ড পার্লামেন্টারি ফোরামের টেকসই উন্নয়ন বিষয়ক সম্মেলনের শেষ দিনে আনা প্রস্তাবে এ অস্বীকৃতি জানায় নয়াদিল্লি।
ওয়ার্ল্ড পার্লামেন্টারি ফোরামের এ বৈঠকে ভারতের পক্ষে যোগ দিয়েছেন লোকসভার স্পিকার সুমিত্রা মহাজন।
এএফপি জানায়, বালির ওই যৌথ ঘোষণায় ‘সব পক্ষকে স্থিতিশীলতা ও নিরাপত্তা ফিরিয়ে আনতে সহিংসতার পরিবর্তে সর্বোচ্চ আত্মসংযমের চর্চা, ধর্ম ও জাতিগত ভিন্নতা সত্ত্বেও রাখাইন রাজ্যের সব জনগণের মানবাধিকারের প্রতি শ্রদ্ধা প্রদর্শনসহ সেখানে মানবিক সহায়তার নিরাপদ প্রবেশের নিশ্চিয়তা প্রদানের আহ্বান’ জানানো হয়।
এ ঘোষণায় ভারতের স্বাক্ষর না করার পক্ষে যুক্তি তুলে ধরে লোকসভা সচিবালয় থেকে দেয়া এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘ফোরামের সমাপনীতে যে প্রস্তাবটি আনা হয়েছিল সেটি টেকসই উন্নয়নের বৈশ্বিক নীতির সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়।’
ভারত-বাংলাদেশ উভয় দেশের নেতারাই বলে থাকেন দুই দেশের বন্ধুত্ব এখন অতীতের যে কোনো সময়ের মধ্যে সেরা সময় পার করছে। কিন্তু তা সত্ত্বেও রোহিঙ্গা ইস্যু নিয়ে বিপর্যস্ত বাংলাদেশের পাশে দাঁড়াতে এমন অস্বীকৃতি এলো ‘বন্ধুপ্রতিম’ ভারতের পক্ষ থেকে।
মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে রোহিঙ্গাদের ওপর দেশটির সেনাবাহিনীর ব্যাপক দমনাভিযান শুরুর পর সেখান থেকে লাখ লাখ রোহিঙ্গা জীবন বাঁচাতে বাংলাদেশে আসছেন।
জাতিসংঘ বলছে, এরই মধ্যে ২ লাখ ৭৫ হাজার রোহিঙ্গা বাংলাদেশে প্রবেশ করেছেন। চলতি দফায় অন্তত তিন লাখেরও বেশি রোহিঙ্গা বাংলাদেশে প্রবেশ করতে পারেন। অতিরিক্ত রোহিঙ্গার চাপে বাংলাদেশের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলীয় এলাকা এখন বড় মানবিক সংকটের মুখে পড়েছে।
এ ইস্যুতে বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক জনমত গঠন করে মিয়ানমারের ওপর চাপ দিতে চাইছে, যাতে তারা তাদের নাগরিকদের বাংলাদেশ থেকে ফিরিয়ে নেয়।
দু’দিন আগে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি মিয়ানমার সফর করেছেন। সেখানে দুই দেশের যৌথ ঘোষণায় রোহিঙ্গা বিষয়ে ভারতের অবস্থান নিজেদের পক্ষে আশা করেছিল বাংলাদেশ। কিন্তু যৌথ ঘোষণায় তার কোনো প্রতিফলন দেখা যায়নি।
রোহিঙ্গা ইস্যুতে মিয়ানমারের পক্ষেই অবস্থান নিয়েছে ভারত। এখন পার্লামেন্টারি ফোরামের যৌথ ঘোষণায়ও ভারত নিজেদের সরিয়ে নিল। মিয়ানমারের সঙ্গে একাত্মতার ক্ষেত্রে এটি ভারতের আরেকটি ধাপ বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।
নীরব চীন : রোহিঙ্গা সংকটে এখন পর্যন্ত কোনো বাক্য খরচ করেনি এ অঞ্চলের অন্যতম ক্ষমতাধর দেশ চীন। চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং নিজেকে বিশ্বনেতৃত্বের পর্যায়ে দেখতে চাচ্ছেন। তবে ঘরের দোরগোড়ায় মানবিক সংকটের মুখে পড়লেও চীনের নতুন বৈশ্বিক নেতৃত্ব তা নিয়ে ভাবছে না।
মুক্ত বাণিজ্য থেকে শুরু করে জলবায়ু পরিবর্তন প্রত্যেক বৈশ্বিক ব্যাপারে দৃষ্টান্ত স্থাপনের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে চীন। চলতি সপ্তাহেও ব্রিকসের শীর্ষ সম্মেলনে সেই লক্ষ্যেই কথা বলেন জিনপিং।
সম্মেলনের শেষ দিন তিনি সদস্য রাষ্ট্রগুলোর সামাজিক ও অর্থনৈতিক উন্নয়নে ৫০ কোটি ডলারের সহায়তা ঘোষণা করেন। কিন্তু প্রতিবেশী দেশ মিয়ানমারে একটি জাতি মানবিক সংকটের মধ্যে পড়েছে, সে ব্যাপারে কার্যত একেবারের নীরব রয়েছে তিনি।
কোয়ার্টস নামের একটি গণমাধ্যম জানায়, ২৫ আগস্ট সহিংসতা শুরু হওয়ার পর ৩১ আগস্ট চীনের পক্ষ থেকে এক বিরল বিবৃতি দেয়া হয়। এতে বলা হয়, ‘একটি বন্ধু রাষ্ট্র হিসেবে’ চীন রাখাইনে সংঘটিত সহিংস হামলার নিন্দা জানাচ্ছে। একই সঙ্গে এ অঞ্চলে শান্তি প্রতিষ্ঠায় মিয়ানমারের প্রচেষ্টায় সমর্থন জানাচ্ছে দেশটি।
রোহিঙ্গা ইস্যুতে অবস্থানের দিক থেকে ভারতের বিবৃতির সঙ্গে চীনের বেশ মিল রয়েছে বলে বিশ্লেষকরা মনে করছেন। চলতি বছরের শুরুতে রোহিঙ্গা ইস্যুতে বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের মধ্যে টানাপোড়েনের ক্ষেত্রে কূটনৈতিক সমঝোতার প্রস্তাব দেয় চীন।
বাংলাদেশ ও মিয়ানমার উভয় দেশই রোহিঙ্গা সমস্যাটিকে একে অপরের দেশের সমস্যা হিসেবে দেখে থাকে। কিন্তু চীনের ওই প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করে মিয়ানমার। এরপর মে মাসে জিনপিং সুচিকে আশ্বস্ত করেন, মিয়ানমারের শান্তি প্রক্রিয়ায় সহায়তা অব্যাহত রাখবে চীন।
সীমান্ত আরও নিশ্ছিদ্র করবে মিয়ানমার : রেডিও ফ্রি এশিয়ার এক প্রতিবেদনে বলা হয়, বাংলাদেশের সঙ্গে নিজেদের সীমান্ত আরও নিশ্ছিদ্র করবে মিয়ানমার। এক্ষেত্রে সীমান্ত পাহারা ও কাঁটাতারের বেড়া দেয়ার কথা আলাপ-আলোচনা করছে দেশটির সরকারের শীর্ষ কর্মকর্তারা।
রাজধানী নেপিদোতে বুধবার এক বৈঠক করেছেন তারা। বৈঠকে দেশটির স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী লেফটেন্যান্ট জেনারেল কিয়ো সয়ে ও সমাজকল্যাণমন্ত্রী ড. উইন মিয়ত অয়ে সীমান্ত নিরাপত্তা আরও জোরদার করার প্রয়োজনীতার কথা বলেন।
তাদের দাবি, রোহিঙ্গাদের মানবিক সহায়তা সরবরাহ করতে তাদের সীমান্তে সন্ত্রাসী হামলা চালানো হচ্ছে। আর তা বন্ধ করতে সীমান্তে বেড়া দেয়া হবে।
source: https://www.jugantor.com/online/international/2017/09/09/57398/আন্তর্জাতিক-ঘোষণায়-স্বাক্ষরে-অস্বীকৃতি-ভারতের
Post a Comment