যুক্তরাষ্ট্রের সামনে বিকল্প কি কমে আসছে?
সিএনএন বিশ্লেষণ
ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষার মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্রকে উত্তর কোরিয়া বুঝিয়ে দিয়েছে, পারমাণবিক ও ক্ষেপণাস্ত্র কর্মসূচি থেকে দেশটি সরবে না। গত মঙ্গলবার পিয়ংইয়ং সাম্প্রতিকতম পরীক্ষাটি চালায়। এবার জাপানের হোক্কাইডো দ্বীপের ওপর দিয়ে উড়ে প্রশান্ত মহাসাগরে গিয়ে পড়ে ক্ষেপণাস্ত্রটি।
মঙ্গলবারের ঘটনার পর ওই দিনই মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেছেন, বিশ্ব স্পষ্টভাবে উত্তর কোরিয়ার বার্তা পেয়েছে। তিনি বলেন, হুমকি দিয়ে এবং অস্থিতিশীলতা সৃষ্টি করে পিয়ংইয়ং একঘরে হয়ে পড়বে। মঙ্গলবার দেওয়া বিবৃতিতে ট্রাম্প আরও বলেন, উদ্ভূত পরিস্থিতির পরিপ্রেক্ষিতে ‘সব বিকল্প পদক্ষেপই বিবেচনায় রয়েছে’।
কিন্তু বিশ্লেষকেরা বলছেন, যুক্তরাষ্ট্রের হাতে আসলে খুব বেশি উপায় বা বিকল্প নেই। এ পর্যন্ত পাঁচবার পারমাণবিক পরীক্ষা চালিয়েছে উত্তর কোরিয়া। দুবার আন্তমহাদেশীয় ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্রের (আইসিবিএম) সফল উৎক্ষেপণ করেছে। এই পরিপ্রেক্ষিতে অধিকাংশ বিশেষজ্ঞ মনে করছেন, পারমাণবিক কর্মসূচি থেকে উত্তর কোরিয়াকে সরিয়ে আনার সুযোগটা আসলে চলে গেছে।
ট্রাম্প প্রশাসন বলেছে, কোরীয় উপদ্বীপকে পারমাণবিক অস্ত্রমুক্ত করতে তারা ‘শান্তিপূর্ণ উপায়ে চাপ প্রয়োগ’ করতে চায়। ওয়াশিংটন উত্তর কোরিয়ার শাসক বা শাসনব্যবস্থায় পরিবর্তন ঘটাতে চায় না।
যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী রেক্স টিলারসন বলেছেন, সামরিক পদক্ষেপের বিষয়টি বিবেচনায় থাকলেও কূটনৈতিক ও অর্থনৈতিক চাপ প্রয়োগের মাধ্যমেই কোরীয় উপদ্বীপের উত্তেজনা নিরসন করতে চায় প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের প্রশাসন। আলোচনার পথ খোলা রয়েছে বলেও গত সপ্তাহে বার্তা দিয়েছেন তিনি।
সেন্টার ফর আমেরিকান প্রগ্রেসের অ্যাডাম মাউন্ট মনে করছেন, মঙ্গলবারের ক্ষেপণাস্ত্র উৎক্ষেপণের পর দৃশ্যপট পাল্টে গেছে। তাঁর মতে, উত্তর কোরিয়ার কাছ থেকে গ্রহণযোগ্য আচরণ কী হতে পারে এবং দেশটি তার আচরণের পরিপ্রেক্ষিতে কী রকম জবাব পেতে পারে, তা নির্ধারণ করে দিতে খুব বেশি কিছু করেনি যুক্তরাষ্ট্র। মাউন্ট বলেন, পরিষ্কার এবং প্রবল প্রতিক্রিয়া দেখাতে পারেনি ওয়াশিংটন।
যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান আরএএনডি করপোরেশনের জ্যেষ্ঠ গবেষক ব্রুস বেনেট বলেন, সামরিক পদক্ষেপ গ্রহণ করা উচিত যুক্তরাষ্ট্রের। উত্তর কোরিয়ার ওপর দিয়ে একটি টমাহক ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ হতে পারে—এ রকম একটি পদক্ষেপ।
যুক্তরাষ্ট্রের জেমস মার্টিন সেন্টার ফর ননপ্রলিফারেশন স্টাডিজের বিশেষজ্ঞ জেফরি লুইস বলেন, ‘পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির পর তাদের (উত্তর কোরিয়া) আক্রমণ করাটা আসলে প্রতিরোধমূলক যুদ্ধ নয়। এটা পারমাণবিক যুদ্ধই।’ তিনি বলেন, উত্তর কোরিয়ার হাতে যদি পারমাণবিক অস্ত্র না-ও থাকে, তারপরও দেশটির সেনাবাহিনীর কাছে যে পরিমাণ গোলাবারুদ রয়েছে, তা দিয়ে দক্ষিণ কোরিয়ার রাজধানী সিউল ও তার আশপাশের এলাকায় ব্যাপক হামলা চালানো সম্ভব।
আর দক্ষিণ কোরিয়ার পুসান ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির রাষ্ট্রবিজ্ঞানের অধ্যাপক রবার্ট কেলির মতে, খুব ভালো বিকল্প আর যুক্তরাষ্ট্রের হাতে নেই।
Post a Comment