Header Ads

test

বরফ জমিয়ে হিমালয়ের কোলের জনপদগুলিতে জল সঙ্কট মোকবেলা সম্ভব?

মাধ্যাকর্ষণ ব্যবহার করে কৃত্রিম হিমবাহে বরফ জামিয়ে রাখা হয়।
মাধ্যাকর্ষণ ব্যবহার করে কৃত্রিম হিমবাহে বরফ জামিয়ে রাখা হয়।
এগার হাজার মিটার বা ৩৫০০ ফুট উচ্চতায় বিশ্বের সবচেয়ে শীতল স্থানে তখন মধ্যরাত। শীতের মাঝামাঝি সময়ে এখানে তাপমাত্রা হিমাঙ্কের প্রায় ৩০ ডিগ্রি নিচে নেমে আসে। পারদের সূচক থাকে -৩০ ডিগ্রি সেলসিয়াস (বা -২২ ডিগ্রি ফারেনহাইট)।
ভারতের উত্তরাঞ্চলে সুউচ্চ হিমালয়ের কোলে লাদাখের তীব্র জল সঙ্কট দূর করতে জড়ো হয়েছেন ১০ জনের একটি স্বেচ্ছাসেবী দল। তারা তৈরি করছেন ৩০ মিটার উঁচু এক কৃত্রিম হিমবাহ।
বসন্ত মৌসুম শুরু হলে এই বরফের স্তূপ আস্তে আস্তে গলতে থাকবে এবং কৃষিকাজের জন্য প্রয়োজনীয় জল সরবরাহ করবে।
বছরের শুরুতে লাদাখে প্রবল জলসঙ্কট দেখা দেয়। সমস্যা থাকে পানীয় জলের, চাষবাসের। সেই সমস্যার সমাধানে অভিনব পরিকল্পনা নেওয়া হয়।
এই বরফের স্তূপের উদ্ভাবক ইঞ্জিনিয়ার সোনাম ওয়াংচুক। তার জন্ম লাদাখে। স্থানীয় মানুষদের নিত্যদিনের সমস্যার মোকাবিলায় দীর্ঘদিন ধরেই তিনি নতুন নতুন পরিকল্পনা তৈরি করেন।
তিনি বলেন, "নিউইয়র্ক বা নয়াদিল্লিতে বসে আমরা সমস্যার সমাধানের কথা ভাবি। কিন্তু তাতে লাভ কিছু হয় না। পাহাড়ের মানুষেরাই সব চাইতে ভালভাবে তাদের সমস্যার সমাধানের পথ বের করতে পারবেন।"
মি. ওয়াংচুক জানান, একদিন একটি সেতুর ওপর দিয়ে যাওয়ার সময় এই কৃত্রিম হিমবাহ তৈরির ভাবনাটি তার মাথায় আসে।
কৃত্রিম হিমবাহের উদ্ভাবক সোনাম ওয়াংচুক
কৃত্রিম হিমবাহের উদ্ভাবক সোনাম ওয়াংচুক
"সেতুর তলায় আমি বরফ দেখতে পাই। সমুদ্রতল থেকে যার উচ্চতা ছিল ৩০০০ মিটার (৯৮৪২ ফুট)। এই জায়গাটি ছিল উচ্চতার দিক থেকে সবচেয়ে নিচে। তবে একই সঙ্গে সব থেকে বেশি উষ্ণও। আর সেটি ছিল মে মাস।"
"আমি ভেবেছিলাম সূর্যের রশ্মি সরাসরি বরফকে গলিয়ে দেবে। কিন্তু সূর্যের তাপ থেকে বাঁচাতে পারলে বরফটিকে জমিয়ে রাখা সম্ভব হবে।"
এভাবেই ২০১৩ সালে তিনি এবং সেকমল অরটারনেটিভ স্কুলের ছাত্ররা লাদাখের এক গ্রাম ফিয়াঙে গিয়ে প্রথমবারের মতো এই বরফের আকৃতি তৈরির কাজ শুরু করেন।
তারা একে বলেন 'বরফ-স্তূপ', কারণ তিব্বতি ধর্মীয় স্তূপের সঙ্গে এর অনেক মিল রয়েছে।
এই কৃত্রিম হিমবাহ তৈরির নেপথ্যে প্রযুক্তিটি বেশ সরল। সাধারণভাবে মাটির নিচে পানির পাইপ পেতে দেয়া হয়। হিমবাহ গলে জল সেই পাইপ দিয়ে নিচে নেমে আসে। পাইপের শেষ অংশটি খাড়া করে রাখা হয়।
উচ্চতা এবং অভিকর্ষ বলের তারতম্যের জন্য পাইপে চাপ তৈরি হয়। পাইপের শেষ প্রান্তটি ফোয়ারার আকার নেয়।
এরপর জল জমে বরফ হয়ে যায়। ধীরে ধীরে তা পিরামিডের আকার নেয়।
মি. ওয়াংচুক বলেন, "আমরা জল জমিয়ে বরফ তৈরি করি। যা শীতকালে ব্যবহার করা হয় না। বিশেষ জ্যামিতিক আকারের জন্য বসন্তের শেষেও বরফই থেকে যায়, গলে যায়না। পরবর্তী সময়ে কৃত্রিম হিমবাহটি গলতে শুরু করলে সেই জল সেচের কাজে ব্যাবহার করা হয়"।
মি. ওয়াংচুকের বিশ্বাস, এই বরফ-স্তূপের ব্যাপারে স্থানীয় জনগণের মধ্যে একটা অধিকারবোধ তৈরি হবে।
বরফ-স্তুপ তৈরির নকশা দেখছেন সোনাম ওয়াংচুক এবং তার সাথীরা।
বরফ-স্তুপ তৈরির নকশা দেখছেন সোনাম ওয়াংচুক এবং তার সাথীরা।
এই কৃত্রিম হিমবাহ নিয়ে ২০১৪ সালে কিছু প্রাথমিক পরীক্ষার পর স্থানীয় ফিয়াঙ মঠ এর সাথে জড়িত হয়।
বৌদ্ধ সন্ন্যাসীরা ২০টি বরফস্তূপ তৈরির অর্ডার দেয়। চাঁদা তোলার মাধ্যমে ১ লক্ষ ২৫ হাজার ২০০ ডলার সংগৃহীত হয়।
এই অর্থের মাধ্যমেই ২.৩ কি.মি. লম্বা পাইপ পাতা হয়। এর মাধ্যমেই কৃত্রিম হিমবাহের জল ফিয়াঙের গ্রামগুলিতে পৌঁছে যায়।
মি. ওয়াংচুক দাবি করছেন এই পাইপ ৫০টিরও বেশী বরফ-স্তূপের জন্য জল সংগ্রহ করতে পারে।
এই সাফল্যের পর মি. ওয়াংচুক সুইজারল্যান্ডে শীতকালীন শৈল নিবাস সেন্ট মরিৎজে একই পদ্ধতিতে বরফ-স্তূপ তৈরির কাজে হাত দিয়েছেন।
প্রাথমিক পরীক্ষায় সাফল্যের পর সুইস সরকার প্রকল্পটি বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে। সুইস পর্বতমালার উপরিভাগের হিমবাহগুলি ক্রমশ গলছে। তা ঠেকাতেই এই উদ্যোগ।
মি. ওয়াংচুক বলছেন, "বরফ-স্তূপের প্রযুক্তির বিনিময়ে ফিয়াঙে টেকসই পর্যটন শিল্পের উন্নয়নে সুইস সরকারের অভিজ্ঞতা কাজে লাগানো হবে। ফিয়াঙের ধসে পড়া অর্থনীতির হালও ফিরবে।"
ভবিষ্যত সম্পর্কে নিয়ে খুবই আশাবাদী মি. ওয়াংচুক।
তিনি বলেছেন, "আমরা বিশ্ববিদ্যালয়ের উৎসাহী যুবকদের প্রশিক্ষণ দিতে চাই, যাতে এক সময়ে তারাও বরফ এবং গ্লেসিয়ার নিয়ে নানা ধরনের উদ্যোগ হাতে নিতে পারে।"
লাদাখের জীবর বরফ গলা পানির ওপর নির্ভরশীল।
লাদাখের জীবর বরফ গলা পানির ওপর নির্ভরশীল।
Source: http://www.bbc.com/bengali/news-41476249

No comments

Thanks for your valuable comment!