Header Ads

test

পথেই রোহিঙ্গা নারীর ১৪তম সন্তান প্রসব

পথেই রোহিঙ্গা নারীর ১৪তম সন্তান প্রসব

২৫-৩০ হাজার ধর্ষিতা অন্তঃসত্ত্বা

তোফায়েল আহমদ, কুতুপালং থেকে   
গত ঈদুল আজহার পাঁচ দিন আগে ঘর থেকে বেরোনোর সঙ্গে সঙ্গেই ভয়ে প্রসব বেদনা শুরু হয়েছিল রোহিঙ্গা গৃহবধূ ছেনুয়ারা বেগমের (৩৫)। তবু পেছনে ফিরে তাকানোর সুযোগ ছিল না।
কারণ তেড়ে আসছিল হায়েনার দল। তাই প্রচণ্ড প্রসব বেদনা নিয়েই পাহাড়ের আড়ালে ঢুকে পড়েছিলেন তিনি। সঙ্গে ছিল তাঁর ১৩ শিশুসন্তান। বেদনায় ছটফট করা মাকে আড়াল করে রেখেছিল তারা। মা কাতরাতে কাতরাতেই প্রসব করেন ১৪ নম্বর সন্তান। নাম রাখা হয় জান্নাত আরা। নবজাতককে বুকে নিয়ে টানা পাঁচ দিন ধরে হেঁটেছেন এই দুঃখিনী মা। তাঁর পা দুটি ফুলে গিয়েছিল। নিজস্ব ভাষায় ছেনুয়ারা বেগম যা বলেন তা বাংলা করলে দাঁড়ায়, ‘পথে সন্তান প্রসব করে হাঁটতে গিয়ে আমি কী যাতনা ভোগ করেছি সেটা আমি আর সৃষ্টিকর্তা ছাড়া অন্য কেউ বুঝবে না। 
কক্সবাজারের উখিয়ার কুতুপালং ১ নম্বর পাহাড়ের নতুন ব্লকে গতকাল শনিবার দুপুরে কথা হয় এই রোহিঙ্গা নারীর সঙ্গে। জান বাজি রেখে সীমাহীন কষ্ট সয়ে বাংলাদেশে আসার কারণ উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘প্রাণ বাঁচাতেই বাংলাদেশ। আশ্রয় মানেই বাংলাদেশ। একটুখানি গাছের ছায়ার জন্য হলেও বাংলাদেশ। শান্তির জন্য হলেও বাংলাদেশ। ’
ছেনুয়ারা আরো বলেন, ‘অকালে আমাদের মেয়েদের বিয়ে হয়। আমার বিয়ে হয়েছে ১৫ বছর বয়সে। আমার এখন ১৪টি সন্তান। ’
ছেনুয়ারা বেগমের সঙ্গে কথা বলার সময় ত্রাণ বিলির তালিকা হচ্ছে মনে করে আরো অনেক রোহিঙ্গা সেখানে উপস্থিত হয়। মংডুর শরফুদ্দিনপাড়া থেকে আসা রোহিঙ্গা আবদুস সোবহান জানান, তাঁর ঘরেও রয়েছে ১২টি সন্তান। মংডু নারিরবিল থেকে আসা রোহিঙ্গা নুরুল ইসলাম জানান, তাঁর রয়েছে ১৩ সন্তান। মংডুর গারতিরবিল থেকে আসা রোহিঙ্গা মোহাম্মদ হোসেন ও স্ত্রী নুরজাহান জানান, তাঁদের রয়েছে ১৩ সন্তান। রোহিঙ্গা শিবিরের বস্তিতে এ রকম প্রত্যেক দম্পতির রয়েছে সন্তানের বিশাল বহর।
রোহিঙ্গা শিবিরে চাল বিতরণের দায়িত্বে নিয়োজিত বেসরকারি সংস্থা মুক্তির সমন্বয়কারী আবদুল্লাহ মামুন শাহীন কালের কণ্ঠকে বলেন, রোহিঙ্গাদের তালিকা করতে গিয়ে একটি পরিবারে ১৭ সন্তানের পর্যন্ত খোঁজ পাওয়া গেছে।
কক্সবাজার পরিবার পরিকল্পনা বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, রাখাইন থেকে আসা পাঁচ লক্ষাধিক রোহিঙ্গার মধ্যে ২৫ থেকে ৩০ হাজার অন্তঃসত্ত্বা আছেন।
ছেনুয়ারা বেগম জানান, রাখাইন রাজ্যের ভুচিদং থানার চেরাগকুনিপাড়ার বাসিন্দা তাঁরা। এলাকায় ১৫ কানির (আড়াই কানি সমান এক একর) মতো জমি রয়েছে। তাঁর স্বামী মোহাম্মদ আলম (৪০) পক্ষাঘাতগ্রস্ত। কাজকর্ম করতে পারেন না। পারেন না হাঁটাচলাও ঠিকমতো করতে। তবু ত্রাণসামগ্রীর আশায় রাস্তায়ই বেশি থাকেন।
ছেনুয়ারা সন্তানদের নিয়ে যখন পালাচ্ছিলেন আলম তখনো রাস্তায় ছিলেন।
ছেনুয়ারা বলেন, রাখাইনে বেশি সন্তান হলেও কারো তেমন মাথাব্যথা নেই। পরিবার পরিকল্পনা সম্পর্কে কোনো ধারণাই নেই ছেনুয়ারার। তিনি বলেন, ‘রিজিকের মালিক আল্লাহ। সন্তান ভূমিষ্ঠ হলে তাদের রিজিকও আল্লাহ বরাদ্দ করবে। ’
কক্সবাজার পরিকল্পনা বিভাগের উপপরিচালক ডা. পিন্টু কান্তি ভট্টাচার্য গতকাল সন্ধ্যায় কালের কণ্ঠকে বলেন, পরিস্থিতি বুঝেই জেলা পরিবার পরিকল্পনা বিভাগ ১০০ স্বেচ্ছাসেবক নিয়োগ দিয়েছে মেডিক্যাল টিমের সঙ্গে পরিবার পরিকল্পনার পিল, কনডম ও অন্যান্য সামগ্রী বিতরণসহ রোহিঙ্গা দম্পতিদের সচেতনতা সৃষ্টির কর্মসূচি বাস্তবায়নের জন্য। এ পর্যন্ত ৫৪৭ জন নারী পরিবার পরিকল্পনা পদ্ধতির তিন মাসের ইনজেকশন নিয়েছেন। তিনি আরো বলেন, পরিবার পরিকল্পনা পদ্ধতিসহ অন্তঃসত্ত্বা নারীদর সেবার জন্য এরই মধ্যে সাতটি মেডিক্যাল ক্যাম্প স্থাপন করা হয়েছে। এসব ক্যাম্পে সেবা দেওয়া হয়েছে তিন হাজার ৬৫৩ জন অন্তঃসত্ত্বার। ২২২ জন রোহিঙ্গা নারীর ডেলিভারি সম্পন্ন করা হয়েছে। প্রায় ছয় হাজার শিশুর চিকিৎসাও দেওয়া হয়েছে এসব ক্যাম্পে।
Source: http://www.allbanglanewspaperlist24.com/newspapers.php?q=kalerkantho.com

No comments

Thanks for your valuable comment!