Header Ads

test

শান্তিতে নোবেল: যাদের নিয়ে গুঞ্জন

শান্তিতে নোবেলজয়ীর হাতে পুরস্কার তুলে দেওয়া হয় নরওয়ের অসলো সিটি হলে। সেই হলের আগের একটি ছবি। ছবি: রয়টার্স
টাইমস ও গার্ডিয়ানের প্রতিবেদন
বছরের অক্টোবর মাসে ঘোষণা করা হয় নোবেল পুরস্কার বিজয়ীদের নাম। এ বছর চিকিৎসা, পদার্থ, রসায়ন ও সাহিত্য নোবেল পুরস্কার ঘোষণা হয়ে গেছে। জানা হয়ে গেছে কারা পুরস্কার পেলেন। বাকি আছে শান্তি ও অর্থনীতিতে পুরস্কার বিজয়ীদের নাম ঘোষণার। বাংলাদেশ সময় শুক্রবার বিকেলে (বিকেল চারটায়) নরওয়ে থেকে ঘোষণা করা হবে শান্তিতে নোবেল পুরস্কারপ্রাপ্ত ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের নাম।
এরই মধ্যে বিশ্বজুড়ে আলোচনা শুরু হয়েছে—কে বা কারা এ বছরের শান্তিতে নোবেল পুরস্কার পেতে যাচ্ছেন।
এ বছর নোবেল শান্তি পুরস্কারের জন্য ৩১৮ ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানকে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে। মনোনীতদের মধ্য থেকে কয়েকজন ব্যক্তি ও দুটি সংস্থা এবারের শান্তিতে নোবেল পুরস্কার পাওয়ার ক্ষেত্রে এগিয়ে আছেন বলে টাইম ম্যাগাজিন ও দ্য গার্ডিয়ানের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে।
রোমান ক্যাথলিকদের ধর্মগুরু পোপ ফ্রান্সিস; জার্মান চ্যান্সেলর আঙ্গেলা ম্যার্কেল; সিরিয়ার স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা হোয়াইট হেলমেটস এবং এর নেতা রিদ আল সালেহ; ইরানের পরমাণু চুক্তির মধ্যস্থতাকারী ইউরোপীয় ইউনিয়নের পররাষ্ট্রনীতিবিষয়ক প্রধান ফেদরিকা মোগেরিনি ও ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোহাম্মদ জাভেদ জারিফ, তুরস্কের ক্যান ডি এন্ডার এবং কামহুরিয়াত, জাতিসংঘের শরণার্থীবিষয়ক সংস্থা, আমেরিকান সিভিল লিবার্টিস ইউনিয়ন, রাইফ বাদাই এবং গাম্বিয়ায় শান্তি স্থাপনে ভূমিকা পালনকারী আঞ্চলিক জোট ইকোনমিক কমিউনিটি অব ওয়েস্ট আফ্রিকান স্টেটস (ইকোওয়াস)।

এ ছাড়া আলোচনায় আছে আন্তর্জাতিক লায়ন্স ক্লাব, উইকিলিকসের প্রতিষ্ঠাতা জুলিয়ান অ্যাসাঞ্জ, অভিনেতা লিওনার্দো ডি ক্যাপ্রিও, রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন ও মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প।
পুরস্কারের জন্য মনোনয়নপ্রাপ্তদের নাম সব সময় গোপন থাকে। গত ৫০ বছর ধরে এটা করা হয়। এরপরও কিছু কিছু নাম প্রকাশ পেয়ে যায়। পুরস্কার ঘোষণার আগে শান্তিতে মনোনয়ন পাওয়া ব্যক্তিদের নিয়ে খবর অনেক সময় সঠিক হয় না।
রোমান ক্যাথলিকদের ধর্মগুরু হন পোপ ফ্রান্সিস। ছবি: রয়টার্স
পোপ ফ্রান্সিস
২০১৩ সালে রোমান ক্যাথলিকদের ধর্মগুরু হন পোপ ফ্রান্সিস। ওই বছর থেকেই নোবেল শান্তি পুরস্কারের জন্য মনোনীত হচ্ছেন তিনি। বিশ্বের শরণার্থী ও অভিবাসীদের জন্য সমবেদনা জানানোর আহ্বান এবং ঐতিহাসিকভাবে রক্ষণশীল ক্যাথলিক চার্চের উদারপন্থী কণ্ঠস্বর হিসেবে এ বছর শান্তিতে নোবেলের জন্য সবচেয়ে সম্ভাব্য বিজয়ী হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে পোপ ফ্রান্সিসকে।
আঙ্গেলা ম্যার্কেল
পর পর চারবার নির্বাচনে জয়ী জার্মান চ্যান্সেলর আঙ্গেলা ম্যার্কেলকে এবারের নোবেল শান্তি পুরস্কারের জন্য অন্যতম দাবিদার মনে করা হচ্ছে। কারণ, ২০১৫ সালে ইউরোপের শরণার্থী সংকটের সময় জার্মানিতে ১০ লাখ মানুষকে আশ্রয় দেওয়ার ঘোষণা দেওয়ার পর থেকে তিনি নোবেল শান্তি পুরস্কারের জন্য অন্যতম দাবিদার। তবে শরণার্থীদের জন্য উদারতা দেখিয়ে আন্তর্জাতিক মহলে প্রশংসিত হলেও নিজ দেশে অনেকটা কোণঠাসা ২০১৫ সালে টাইম ম্যাগাজিনের দৃষ্টিতে পারসন অব দ্য ইয়ার ম্যার্কেল। গত মাসে জাতীয় নির্বাচনে তাঁর নিজ দল বিজয়ী হলেও অভিবাসন নীতির কারণে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর সবচেয়ে কমসংখ্যক আসন পেয়েছে দলটি।
সিরিয়ার উদ্ধারকর্মীদের দল ‘হোয়াইট হেলমেট’-এর এক কর্মী দেশটির ডৌমা শহরে এক শিশুকে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নিচ্ছেন। ছবি: এএফপি
সিরিয়ার ‘হোয়াইট হেলমেটস’
গত বছর নোবেল শান্তি পুরস্কারের জন্য সিরিয়ার উদ্ধারকর্মীদের দল ‘হোয়াইট হেলমেট’ বা সিরিয়া সিভিল ডিফেন্স অর্গানাইজেশনের নাম খুব বেশ আলোচিত হয়েছিল। কিন্তু কয়েক দশকের গৃহযুদ্ধ অবসানের কৃতিত্বের স্বীকৃতি হিসেবে কলম্বিয়ার প্রেসিডেন্ট ম্যানুয়েল সান্তোস পুরস্কার পেয়ে যান। এবার হোয়াইট হেলমেটসের নাম পুরস্কারের জন্য বেশ আলোচিত হচ্ছে। ২০১১ সালে সিরিয়ায় গৃহযুদ্ধ শুরু হলে এ সংস্থাটি ৯৯ হাজার মানুষের প্রাণ বাঁচিয়েছে।
ছয় বছরের গৃহযুদ্ধে ছিন্নভিন্ন সিরিয়ার বেসামরিক নাগরিকদের সাহায্য করার জন্য অসাধারণ প্রচেষ্টাকে গুরুত্বপূর্ণ মানবিক কাজ এবং সামাজিক সংহতির স্বীকৃতি হিসেবে নোবেল শান্তিতে এগিয়ে ‘হোয়াইট হেলমেট’। কারণ, দেশটিতে নৃশংস সামরিক আক্রমণ এবং চরম বিপদের মুখে কাজ করে যাচ্ছে সংস্থাটি।
ফেদরিকা মোগেরিনি ও জাভেদ জারিফ। ছবি: সংগৃহীত
ফেদরিকা মোগেরিনি ও জাভেদ জারিফ
২০১৫ সালে ইরানের পরমাণু কর্মসূচি নিয়ে ঐতিহাসিক চুক্তিতে উপনীত হতে মধ্যস্থতা করেন ইউরোপীয় ইউনিয়নের পররাষ্ট্রনীতিবিষয়ক প্রধান ফেদরিকা মোগেরিনি ও ইরানি পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোহাম্মদ জাভেদ জারিফ। এই চুক্তির কারণে যুক্তরাষ্ট্র ও ইরানের মধ্যকার বেশ কয়েক বছরের উত্তেজনা কর অবস্থার অনেকটা অবসান ঘটে। এই কৃতিত্বের জন্য ফেদরিকা ও জাভেদকে নোবেল শান্তি পুরস্কারের জন্য অন্যতম দাবিদার মনে করা হচ্ছে।
ইকোওয়াস
চলতি বছরের জানুয়ারিতে জাম্বিয়ায় শান্তিপূর্ণভাবে ক্ষমতা হস্তান্তরে ভূমিকা রাখে পশ্চিম আফ্রিকান জোট ইকোনমিক কমিউনিটি অব ওয়েস্ট আফ্রিকান স্টেটস (ইকোওয়াস)। নির্বাচনে হেরে যাওয়ার পর ২২ বছর ধরে ক্ষমতায় থাকা ইয়াহিয়া জাম্মেহ প্রথমে ক্ষমতা হস্তান্তরে অস্বীকৃতি জানিয়েছিলেন। কিন্তু ইকোওয়াসের ভূমিকার কারণে গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত নতুন প্রেসিডেন্ট আদামা ব্যারোর কাছে দায়িত্ব বুঝিয়ে দিতে বাধ্য হন তিনি।
তুরস্কের একটি পত্রিকার প্রধান সম্পাদক ক্যান ডি এন্ডার। তিনি এখন জার্মানিতে নির্বাসনে আছেন। ছবি: এএফপি
ক্যান ডি এন্ডার এবং কামহুরিয়াত
তুর্কি কামহুরিয়াত পত্রিকার প্রধান সম্পাদক ক্যান ডি এন্ডার এখন জার্মানিতে নির্বাসনে আছেন। তাঁর পত্রিকার কয়েকজন সংবাদকর্মীর বিরুদ্ধে সন্ত্রাসবাদে জড়িত থাকার অভিযোগ ওঠে। এর বিরুদ্ধে লড়াই করেন কলামিস্ট ক্যান। রিসেফ তাইয়েপ এরদোয়ানের গণমাধ্যমের স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ করলে এর বিরুদ্ধে লড়াই করেন ক্যান।
বাংলাদেশের উখিয়ায় কুতুপালংয়ে মিয়ানমার থেকে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গার সঙ্গে ফিল্লিপো গ্রান্ডি। ছবি: এএফপি
ইউএনএইচসিআর
জাতিসংঘ শরণার্থীবিষয়ক এই সংস্থা এর আগে দুবার শান্তিতে নোবেল পুরস্কার পেয়েছে। সর্বশেষ ১৯৮১ সালে পুরস্কার পাওয়া জাতিসংঘের এই সংস্থা এ বছর বিশ্বব্যাপী অভিবাসন এবং শরণার্থীদের নিয়ে এর নেতা ফিল্লিপো গ্রান্ডির নেতৃত্বে ভালো কাজ করেছে। বিশ্বে এ বছর যারা এ পুরস্কার পাওয়া হিসেবে আলোচিত, সেখানে এগিয়ে জাতিসংঘ শরণার্থীবিষয়ক এই সংস্থা। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে সংস্থাটি সিরিয়ার গৃহযুদ্ধ, ইউরোপের শরণার্থী সংকট এবং মিয়ানমার থেকে পালিয়ে বাংলাদেশ যাওয়া মুসলিম রোহিঙ্গাদের নিয়েও কাজ করছে শরণার্থীবিষয়ক সংস্থা।
ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারসহ মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের নানান বিতর্কিত সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে আমেরিকান সিভিল লিবার্টিস ইউনিয়ন আইনি লড়াই চালিয়ে যাচ্ছে। ছবি: সংগৃহীত
আমেরিকান সিভিল লিবার্টিস ইউনিয়ন
আমেরিকান সিভিল লিবার্টিস ইউনিয়ন দেশটির প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের দায়িত্ব গ্রহণের দিন থেকে সক্রিয় আছে। ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারসহ মার্কিন প্রেসিডেন্টের নানান বিতর্কিত সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে তারা আইনি লড়াই চালায়। এরা ট্রাম্পকে ‘এক ব্যক্তির সাংবিধানিক সংকট’ হিসেবে বর্ণনা করেছে।
সৌদি ব্লগার রাইফ বাদাইয়ের ছবি হাতে তাঁর স্ত্রী এনসাফ হায়দার। ছবি: সংগৃহীত
রাইফ বাদাই
রাইফ বাদাই একজন সৌদি ব্লগার। টেলিভিশনে ইসলাম নিয়ে বিরূপ মন্তব্য করেছেন—এমন অভিযোগে ২০১২ সালের জুনে গ্রেপ্তার হন তিনি। ইসলামের অবমাননার অপরাধে দোষী সাব্যস্ত হয়ে ১০ বছরের জেল এবং এক হাজার দোররা মারার সাজা হয়। সাহস, যুক্তি ও বক্তব্যর স্বাধীনতার জন্য কাজ করছেন দাবি করে বিশ্বজুড়ে মানবাধিকার সংস্থাগুলো তার মুক্তির পক্ষে সোচ্চার। নিষ্ঠুর নিপীড়নমূলক শাসনের সমালোচনা করায় তিনি নোবেল শান্তি পুরস্কার পাওয়ার অন্যতম দাবিদার বলে মনে করা হয়েছে।
*টাইমস ও গার্ডিয়ান অবলম্বনে রাশেদুল আলম রাসেল

Source: www.prothom-alo.com/international/article/1337966/শান্তিতে-নোবেল-যাদের-নিয়ে-গুঞ্জন

No comments

Thanks for your valuable comment!