গত শুক্রবার (২৫ আগস্ট) পাঁচ কোটি ভক্তের গুরু গুরমিত রাম রহিম সিং ইনসান
ধর্ষণে দোষী সাব্যস্ত হওয়ায় যেভাবে ভক্তরা ভয়াবহ সহিংসতা ঘটিয়েছিলেন,
সেই ঘটনা থেকে শিখেই সোমবার (২৮ আগস্ট) সাজা ঘোষণার দিন ভক্তদের
টু-শব্দ করতে না দেওয়ার কৌশল নিয়েছে প্রশাসন।
এর পুরো দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে ভারতীয় সেনার বিশেষ কমান্ড বাহিনীকে। প্রয়োজনে
বিমান বাহিনীর সদস্যরাও আকাশ পথে প্রশাসনের রণকৌশল বাস্তবায়নে সাহায্য করবে।
পুলিশ ছাড়াও আইনশৃঙ্খলারক্ষাকারী বাহিনীর প্রায় সব ইউনিটকে কাজ লাগানো হবে
সোমবার।
সোমবার হরিয়ানার পাঁচকুলার সিবিআইয়ের বিশেষ আদালতে স্বঘোষিত ধর্মগুরু গুরমিত
রাম রহিম সিং ইনসানের উপস্থিতিতে ধর্ষণের সাজা ঘোষণা করবেন বিচারক।
এর আগে গত শুক্রবার সকাল থেকেই সেনাবাহিনী ওই আদালত চত্বর ঘিরে রেখেছে।
আগের তিন কলাম সেনার সঙ্গে নতুন করে সেখানে আর ছয় কলাম সেনা মোতায়েনও
করা হয়েছে বলে জানা গেছে।
হরিয়ানা, পাঞ্জাব, রাজস্থান, উত্তরপ্রদেশের গাজীবাদ এমন কি, রাজধানী দিল্লিতেও রাম
রহিম সিং ইনসানের ভক্তদের তাণ্ডব কোনোভাবে প্রশাসন মেনে নেবে না। হরিয়ানায়
পুলিশকে উত্তেজিত ভক্তদের দেখা মাত্রই গুলি চালানোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
“মন কি বাত” ভারতীয় সরকারি রেডিও ভাষণে দেশটির প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি
রবিবার সহিংসতাকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর মনোভাবের ইঙ্গিত দিয়েছেন। মোদি এদিন
রুটিন রেডিও ভাষণে, ওই দুই রাজ্যে হিংসা ছড়ানোয় তীব্র নিন্দা করেন এবং বিশ্বাসের
নামে হিংসা ছড়ানো কোনভাবেই মেনে নেওয়া হবে না বলেও ঘোষণা দেন।
এর আগে, হরিয়ানা হাইকোর্ট হিংসা ছড়ানোর জন্য রাজ্য প্রশাসন এমন কি কেন্দ্রের
ভূমিকারও সমালোচনা করেছিলেন। হাইকোর্টের সমালোচনার পরই কেন্দ্রীয় সরকার ও
হরিয়ানা রাজ্য প্রশাসন অতিরিক্ত সর্তকতা অবলম্বন করেছে।
ধর্ষক হিসেবে দোষী সাব্যস্ত গুরমিত রাম রহিম সিং ইনসান এখন হরিয়ানার রহতুকের
সুনারিয়ার কেন্দ্রীয় কারাগারে ১৯৯৭ নম্বর সেলে বন্দি রয়েছেন।
ভারতীয় গণমাধ্যম বলছে, বিছানা বালিশ না থাকায় রাতে প্রায় নির্ঘুম সময় কাটিয়েছেন
এ ধর্মগুরু। এমন কি কারও সঙ্গে তেমন কথাও বলছেন না তিনি। রাতের খাবারে তিনি
দুধ আর রুটি খান এবং ভোরে কিছুক্ষণ যোগাসন করেন।
কারাগারে তাঁর সেলের বাইরে রুটিন কারারক্ষী ছাড়াও অতিরিক্ত আরও চারজন রক্ষীকে
সুনারিয়া কারাকর্তৃপক্ষ নিযুক্ত করেছে। তাছাড়াও, সেলের বাইরে দুটি সিসিটিভি
রয়েছে - তা দিয়ে শীর্ষ কর্মকর্তারাও স্বঘোষিত ধর্মগুরুকে দেখতে পারছেন।
১৯৯৯ সালে দুই ভক্ত শিষ্যাকে ধর্ষণের অভিযোগে ২০০২ সালে সিবিআইয়ের বিশেষ
আদালতে মামলা করে প্রশাসন। প্রায় ১৪ বছর মামলাটি চলার পর গত শুক্রবার হরিয়ানার
পাঁচকুলার বিশেষ আদালত স্বঘোষিত ধর্মগুরুকে দোষী সাব্যস্ত করেন।
হরিয়ানার ডেরা সাচ্চা সৌদার প্রধান রাম রহিম সিং ইনসানের পাঁচ কোটি নথিভুক্ত শিষ্য
রয়েছেন। শুক্রবার রায় ঘোষণার পরই এদের মধ্যে কমপক্ষে পাঁচ লক্ষ ভক্ত আদালতের
বাইরে সহিংসতায় জড়িয়ে পড়েন। পুলিশ আইনশৃঙ্খলার রক্ষার্থে গুলি চালালে ৩২ জন
ভক্তের মৃত্যু হয়। আহত হন কমপক্ষে এক হাজার ভক্ত। উত্তেজিত ভক্তদের তাণ্ডবে
সরকারি ও বেসরকারি মিলিয়ে প্রায় আড়াই হাজার কোটি রুপির সম্পদ নষ্ট হয়।
Post a Comment