Header Ads

test

বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত অর্ধ কোটির বেশি: ত্রাণ নিয়ে অভিযোগ

বাংলাদেশে উত্তরের বন্যাদুর্গত জেলাগুলোতে সরকারি ত্রাণ তৎপরতা যথেষ্ট নয় বলে অভিযোগ উঠছে। এসব জেলার ক্ষতিগ্রস্ত মানুষেরা বলছেন, বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা বা এনজিও গুলোও এখনো সেভাবে কোন সাহায্য দিচ্ছে না।
সরকারি হিসাবে বলা হচ্ছে ২৬টি জেলায় দেখা দেয়া এ বন্যায় এখন পর্যন্ত ৯৪ জনের মৃত্যু হয়েছে। প্রায় ৫৫ লক্ষ মানুষ ক্ষতিগস্ত হয়েছেন।
দুর্গত এলাকাগুলোতে এখন শিশু-খাদ্য, বিশুদ্ধ পানি, এবং গবাদি পশুর খাবারের তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে।
আবহওয়া দফতর বলছে উত্তরের জেলাগুলোর পানি নেমে যাচ্ছে, কিন্তু দক্ষিণ ও মধ্যাঞ্চলের জেলাগুলোয় পানি বাড়ছে।
এবারের বন্যায় পুরো দিনাজপুর জেলা পানিতে তলিয়ে ছিল সপ্তাহখানেক সময় ধরে। এখন পানি কমতে থাকায় রাস্তা-রেললাইন এবং অনেক জায়গায় মানুষের বসতভিটা জেগে উঠেছে।
বিভিন্ন স্কুল বা আশ্রয়কেন্দ্রে আশ্রয় নেয়া অনেক মানুষ ঘরে ফিরছেন। কিন্তু ঘর-বাড়ি আবার বসবাসের উপযোগী করার অবস্থাও অনেকের নেই।
দিনাজপুর শহরতলীর কৃষক আব্দুল আলীম টিনের চাল পর্যন্ত ডুবন্ত বসত ফেলে আশ্রয়কেন্দ্রে উঠেছিলেন দশদিন আগে। এখন পানি নেমে যাওয়ায় তিনি পরিবারের সদস্যদের নিয়ে এলাকায় ফিরেছেন। কিন্তু মাটির ঘর ধসে পড়ে বিধ্বস্ত চেহারা নিয়ে আছে। ফলে দূরে এক আত্নীয়র বাড়িতে উঠেছেন।
নিজের বাড়ি সংস্কার করবেন কিভাবে, সেই সামর্থ্য এখন আব্দুল আলীমের নেই। তার তিন বিঘা জমির আমন পানিতে তলিয়ে নষ্ট হয়ে গেছে।
তিনি বলছিলেন, “আশ্রয়কেন্দ্রে থাকার সময় সরকার সাহায্য পাইনি। এখনও কেউ সাহায্য করছে না। জানি না, আমরা এখন কিভাবে আবার আগের জীবন ফিরে পাব?”
দিনাজপুর থেকেই বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত আরেকজন কৃষক আবু বকর অভিযোগ করেন, তিনিও সরকার বা এনজিও কারও কাছ থেকে ত্রাণ সহায়তা পাননি।
উত্তরের বন্যাদুর্গত আরেক জেলা কুড়িগ্রামের নাগেশ্বরী এলাকার কয়েকটি গ্রামের মানুষ ১৯৮৮ সালের পর এত ভয়াবহ বন্যা দেখেননি। সেখান থেকেও কয়েকজন বলছিলেন, সংকটে তাদের পাশে দাঁড়ানোর কেউ নেই বলেই তারা ধরে নিয়েছেন।
দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা নিয়ে কাজ করেন নইম ওয়াহারা, বন্যা কবলিত কয়েকটি জেলা ঘুরে তিনি বলছেন, কাগজে কলমে অনেক কথা বলা হলেও বাস্তবে ত্রাণ তৎপরতা ধীরগতিতে চলছে।
বন্যা কবলিত জেলাগুলোতে পশুর খাদ্যেরও বড়ধরনের সংকট হয়েছে।
“কোরবানির ঈদের জন্য গরু ব্যবসায়ীরা গ্রামে গরু পালনকারীদের কিছু আগাম টাকা দিয়েছে। ব্যবসায়ীরা ঈদের তিনদিন আগে গরু নিতে চেয়েছে। এখনি আগাম কিছু টাকা নেয়ায় তারা গরুটাকে বিক্রি করতে পারছে না। আবার গরুর রক্ষনাবেক্ষণ নিয়েও তারা সমস্যায় পড়েছে,” বলছিলেন নইম ওয়াহারা।
এবারে বন্যার ত্রাণ তৎপরতা নিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গনেও অভিযোগ পাল্টা অভিযোগ হয়েছে।
বিরোধীদল বিএনপি ত্রাণ তৎপরতায় সরকারের বিরুদ্ধে ব্যর্থতার অভিযোগ তুলেছে। সরকার তা নাকচ করেছে। তবে বন্যার ভয়াবহতাকে সরকার উপেক্ষা করতে চাইছে, এমন অভিযোগও উঠছে।
কুড়িগ্রামের চিলমারি থেকে একজন কলেজ শিক্ষক নাহিদ নলেজ বলছিলেন, সরকার পরিস্থিতিকে খুব একটা গুরুত্ব দিচ্ছে না। ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় থেকে তাদের এমনটা মনে হয়েছে।
সরকারের ত্রাণ তৎপরতা নিয়ে যেমন অভিযোগ রয়েছে, বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা বা এনজিওগুলোও ক্ষতিগ্রস্ত এলাকাগুলোতে এখনও সেভাবে তৎপর নয় বলে অভিযোগ উঠেছে। এনজিওগুলো এখন তাদের ত্রাণ তৎপরতা জোরদার করার কথা বলছে। আর সরকার বিভিন্ন অভিযোগ অস্বীকার করছে।
দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা এবং ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব সত্যব্রত সাহা বলছিলেন, “এই বন্যার পূর্বভাস পেয়েই সরকার ঝুঁকিপূর্ণ জেলাগুলোতে আগাম ত্রাণ এবং অর্থ মজুদ করেছিল। সেখান থেকে তাৎক্ষণিকভাবে ক্ষতিগ্রস্তদের পর্যাপ্ত ত্রাণ সহায়তা দেয়া হয়েছে। এখন সহায়তা আরও বাড়ানো হয়েছে।”
এখন অবশ্য মন্ত্রীরাও ক্ষতিগ্রস্ত এলাকাগুলো সফর করছেন। রোববার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বন্যাদুর্গত উত্তরের জেলাগুলোতে যাওয়ার কথা রয়েছে। (বিবিসি বাংলা) 

No comments

Thanks for your valuable comment!