ইউনিসেফে চাকরি দেয়ার নামে সক্রিয় প্রতারক চক্র
সিরাজুল ইসলাম |
প্রকাশ : ২৮ আগস্ট, ২০১৭ ০৫:২০:৫৭ | অাপডেট: ২৮ আগস্ট, ২০১৭ ০৯:৪৫:০৪
ইউনিসেফে চাকরি দেয়ার নামে সক্রিয় প্রতারক চক্র
কোটি টাকা নিয়ে চম্পট * সাত প্রতারক চিহ্নিত * তিনজন গ্রেফতার
ইউনাইটেড ন্যাশন্স ইন্টারন্যাশনাল চিল্ড্রেন ইমারজেন্সি ফান্ডে (ইউনিসেফ) চাকরি দেয়ার নামে দীর্ঘ দিন ধরে প্রতারণা করছে একটি চক্র। বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা ও ভুয়া নিরাপত্তা প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে চক্রটি সারা দেশে প্রতারণার জাল বিস্তার করেছে।
বিভিন্ন পদে চাকরি দেয়ার নাম করে চক্রটি শিক্ষিত বেকারদের কাছ থেকে দুই থেকে সাড়ে পঁাচ লাখ পর্যন্ত টাকা নেয়। তাদের এক মাসের ট্রেনিং দেয়া হয়। টেনিং ফি হিসেবে ১০ হাজার টাকা করে নেয়া হয়। ট্রেনিং শেষে নিয়োগপত্র হাতে ধরিয়ে দিয়ে সটকে পড়ে প্রতারক চক্রের সদস্যরা। সম্প্রতি চক্রটির বিরুদ্ধে ২৬ জনের কাছ থেকে প্রায় এক কোটি টাকা হাতিয়ে নেয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ চক্রের সাতজনকে চিহ্নিত করেছে পুলিশ। তাদের মধ্যে তিনজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
যাত্রাবাড়ী থানার ওসি আনিছুর রহমান যুগান্তরকে জানান, গ্রেফতার তিনজনকে বুধবার আদালতে হাজির করে প্রত্যেককে সাত দিন করে রিমান্ডে নেয়ার আবেদন জানায় পুলিশ। আদালত রিমান্ড মঞ্জুর না করে তাদের কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন।
তিনি জানান, বুধবার রাতে তিন প্রতারককে গ্রেফতার করা হয়। তারা হলেন- রফিকুল ইসলাম (৪৭), আলমগীর (৪৬) ও মামুনুর রশিদ (৩৯)। এ চক্রের অন্য সদস্যরা হলেন∏ শফিকুল ইসলাম (৪০), আবু নাসের ইমতিয়াজ (৫০), শাহাদাত হোসেন (৪২) ও ইউসুফ পাটোয়ারী (৪৩)।
এসআই বিলাল আল আজাদ বলেন, প্রতারকরা জনতা সমাজকল্যাণ ফাউন্ডেশন এবং নাসের সিকিউরিটি অ্যান্ড সোর্সিং লিমিটেডের মাধ্যমে সারা দেশ থেকে লোক সংগ্রহ করে। সম্প্রতি ২৬ জনের কাছ থেকে টাকা নেয়া হয়। ইউনিসেফে সুপারভাইজার ও ম্যাসেঞ্জার পদে তাদের চাকরি দেয়ার কথা ছিল। সুপারভাইজার পদে ৩২ হাজার ৪০০ এবং ম্যাসেঞ্জার পদে ২৮ হাজার ২০০ টাকা বেতন দেখিয়ে তাদের নিয়োগপত্র দেয়া হয়। কাউকে আবার ইউনিসেফের লগোসংবলিত পরিচয়পত্রও দেয়া হয়। চাকরি প্রার্থীদের কাছ থেকে পুলিশ ক্লিয়ারিংসহ প্রয়োজনীয় কাগজপত্র নেয়ার পর ডেমরার আমুলিয়া মডেল টাউন এলাকার গ্রিন লাইন ট্রেনিং সেন্টারে তাদের প্রশিক্ষণ দেয়া হয়।
পুলিশ জানায়, জনতা সমাজকল্যাণ ফাউন্ডেশন ২০০৯ সাল থেকে দেশের বিভিন্ন স্থানে শাখা খুলে নানা ধরনের প্রতারণা করে আসছে। জামালপুরে প্রতিষ্ঠানটির ১০টি শাখা রয়েছে। সিলেটে শাখা খুলে ঋণ দেয়ার নাম করে ২০০০ হাজার গ্রাহক তৈরি করে প্রতিষ্ঠানটি। চলতি বছর মে মাসে জামানতের কোটি কোটি টাকা আত্মসাত্ করে অফিস গুটিয়ে সটকে পড়ে চক্রটি। জনতা সমাজকল্যাণ ফাউন্ডেশনের মালিক হলেন শফিকুল ইসলাম, মহাব্যবস্থাপক হলেন রফিকুল ইসলাম ও মার্কেটিং ডিরেক্টর হলেন আলমগীর। উত্তর যাত্রাবাড়ী কলাপট্টির প্রতিষ্ঠানটিতে অভিযান চালিয়ে রফিকুল ও আলমগীরসহ তিনজনকে গ্রেফতার করা হয়। শফিকুল পলাতক।
সূত্র জানায়, চাকরি দেয়ার সময় আউটসোর্সিং প্রতিষ্ঠান হিসেবে নাসের সিকিউরিটি অ্যান্ড সোর্সিং লিমিটেডের নাম উলে্লখ করা হয়। প্রতিষ্ঠানটির ঠিকানা দেয়া হয়- উত্তরা ১৪ নম্বর সেক্টরের ১৪ নম্বর রোডের ১৩ নম্বর বাড়ি। কিন্তু পুলিশ সেখানে এ ধরনের প্রতিষ্ঠান পায়নি। এসআই আজাদ জানান, ইউনিসেফে চাকরি দেয়ার কথা বলে টাকা নেয়ায় পুলিশের পক্ষ থেকে নিউনিসেফের কান্ট্রি ডিরেক্টরসহ সংশি্লষ্ট কর্মকর্তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। পুলিশকে তারা জানান, প্রতিষ্ঠান দুটির সঙ্গে তাদের কোনো সম্পৃক্ততা নেই।
ভুক্তভোগী বিল্লাল হোসেন যুগান্তরকে জানান, সুপারভাইজার পদে চাকরি দেয়ার নাম করে জামানত হিসেবে ২ মে তাদের কাছ থেকে টাকা নেয় প্রতারকরা। তিনি বলেন, তার কাছ থেকে তিন লাখ ৫০ হাজার টাকা, তার বন্ধু জয়ন্ত মসিদের কাছ থেকে দুই লাখ ৭০ হাজার এবং গোপাল মসিদের কাছ থেকে দুই লাখ ৫০ হাজার টাকা প্রতারকরা হাতিয়ে নিয়েছে। তাদের আইডি কার্ড দেয়াসহ ট্রেনিং করানো হয়।
ভুক্তভোগী নূর মোহাম্মদ জানান, সুপারভাইজার পদে চাকরি দেয়ার নাম করে ২ মে তার কাছ থেকে তিন লাখ টাকা নেয়া হয়। একই দিনে তার বন্ধু রবিউল করিমকে ম্যাসেঞ্জার পদে চাকরি দেয়ার নামে দুই লাখ টাকা এবং সুপারভাইজার পদে চাকরি দেয়ার নামে মারুফ হাসানের কাছ থেকে দুই লাখ টাকা নেয়া হয়।
তাদের ২৬ জনকে এক সঙ্গে ট্রেনিং দেয়া হয়। জামানত ছাড়াও প্রত্যেকের কাছ থেকে ট্রেনিং ফি নেয়া হয়। কিন্তু কাউকে তারা চাকরি দেয়নি।
Post a Comment